জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে পোস্টাল ভোট নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় পর্তুগাল বিএনপির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার স্থানীয় সময় লিসবনের একটি হল রুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পর্তুগাল বিএনপির আহবায়ক আবু ইউসুফ তালুকদার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব ছায়েফ আহমেদ সুইট। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন বলেন— “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনের প্রকৃত তাৎপর্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আজ আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।” তিনি পর্তুগাল বিএনপির সফল আয়োজনের প্রশংসা করে আরও জানান, দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অসাংগঠনিক কার্যক্রম করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। সভাপতির বক্তব্যে আহবায়ক আবু ইউসুফ তালুকদার বলেন— “পর্তুগালে বসবাসরত যোগ্য ও সক্রিয় নেতাকর্মীদের নিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে। পদ-পদবীর লোভে যারা অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সদস্য সচিব ছায়েফ আহমেদ সুইট প্রবাসীদের পোস্টাল ভোট দেওয়ার সকল নিয়ম-কানুন বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন— “দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে পোস্টাল ভোট দিলে দেশ ও গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।” তিনি ৫ আগস্ট বেগম জিয়ার সাথে ফিরোজায় সাক্ষাতের সময় পর্তুগাল বিএনপি ও প্রবাসীদের বিষয়ে যেসব আলোচনা হয়েছিল—সেগুলোর কথাও তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— যুগ্ম আহবায়ক শামসুজ্জামান জামান, মিজানুর রহমান শাহ জামাল, এম কে নাসির, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ আহমেদ ফাহিম, পর্তুগাল বিএনপির সদস্য বদরুল আলম, শাহাব উদ্দীন, রুবেল চৌধুরী, জুবেল আহমদ, জায়েদ আহমদ, বেজা বিএনপির সভাপতি মইনুল ইসলাম, সান্তারাইম বিএনপির আহবায়ক সোহেল চৌধুরী, আলগ্রাভ বিএনপি নেতা এম তাহের, সেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আজীম চৌধুরী গিলমান, বিএনপি নেতা আলী আকবর জুয়েল, কাজী জুয়েল, শাহান উমর, সোহেল মিয়া, জাসাস সদস্য সচিব কাজী মইনুর, যুবদল নেতা মাজেদ আহমদ সামী, এস এম কাওসার আলম, মর্তুজ আলী, যুবনেতা আব্দুল ওয়াদুদ মোহন প্রমুখ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— আব্দুল আজিজ, মহদ আজাদ, মন্জুর এলাহী, মাহাদী মুন্না, আব্দুল ওয়াদুদ অনিক, দেলোয়ার খান, আরাফাত, আদনান ওলি, নাইম, তারেক, শুভ, ইকবাল, রাফিউজ্জামান খান, সায়েম তালুকদার, মসতফা কামাল, আলমগির হোসেন, মোহাম্মদ সৈইকত, আহমদ লিমন, রিয়াদ আহমদ, রাশেদ মাহমুদ, আবু নাইম, পাপ্পু হাসান, রাহিদ মিয়া, এস কে মুহিব, সামাদ রাজিবসহ আরও অনেকে। এছাড়া ভেজা বিএনপি থেকে উপস্থিত ছিলেন—আবু বকর, শফিক মিয়া, জদর আলী, আতিকুর রহমান, মাহবুব আলম, আলাল আহমদ, জামিল আহমেদ, শাওন মিয়া, শামসুল হক। আল্গ্রাভ বিএনপি থেকে উপস্থিত ছিলেন—আবু সাইদ, মো. নুরুজ্জামান, মো. তাহির হোসেন, মো. দেলওয়ার হোসাইন, মো. ইমরান প্রমুখ। আলোচনা শেষে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি, দীর্ঘায়ু, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ সম্পন্নতা এবং দেশের সার্বিক শান্তি, উন্নয়ন ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন লিসবন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা কায়েস আহমেদ আব্দুল্লাহ।
পর্তুগাল বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ও পোস্টাল ভোটিং সম্পর্কে পর্তুগাল প্রবাসীদের মধ্যে জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে আলোচনা সভা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। ৩০ শে নভেম্বর পর্তুগালের টেস্টি অব লিসবনে পর্তুগাল সময় রাত ৮:৩০ ঘটিকায় এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। উক্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জনাব, আনোয়ার হোসেন খোকন। সভাপতিত্ব করবেন পর্তুগাল বিএনপির আহ্বায়ক আবু ইউসুফ তালুকদার ও সঞ্চালনায় থাকবেন পর্তুগাল বিএনপির সদস্য সচিব ছায়েফ আহেমদ সুইট সহ পর্তুগাল বিএনপি ও এর অঙ্গসংঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল নিয়ে পর্তুগাল বিএনপির আহব্বায়ক আবু ইউসুফ তালুকদার ও সদস্য সচিব ছায়েফ আহমেদ সুইট জানান, "আজকের এই আলোচনা সভায় প্রবাসীদের মধ্যে পোস্টাল ভোটিং সম্পর্কে জনসচেতনা কে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ নেত্রীর দ্রুত রোগমুক্তির জন্য দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়েছে এবং তারা পর্তুগাল বিএনপি ও সকল অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানান"।
মালদ্বীপের হুলহুমালে’ সমুদ্রবন্দর থেকে চোরাচালানকৃত সিগারেটের দুটি কন্টেইনার চুরির ঘটনায় একজন বাংলাদেশি নাগরিক মো: আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, আজ ১৬ নভেম্বর, রবিবার এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মোট সন্দেহভাজনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। পুলিশ জানায়, চুরি হওয়া সিগারেটের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ পিস, যার বাজারমূল্য অত্যন্ত বেশি। ঘটনাটিকে বড় ধরনের সংগঠিত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে কর্তৃপক্ষ। গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশি মো: আল আমিনকে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখা হবে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে পুলিশ আরও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং পুরো চক্রকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে
কুয়ালালামপুর: মালয়েশিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো দেশের নতুন জরুরি কল সিস্টেম Next Generation Emergency Services (NG999)। রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকে এটি পূর্বের Malaysian Emergency Responses 999 (MERS999) সিস্টেমের সম্পূর্ণ বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) থেকে জনসাধারণকে পাঠানো এসএমএস বার্তায় NG999 ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, দ্রুত ও সঠিকভাবে জরুরি তথ্য প্রেরণের জন্য অ্যাপস্টোর বা গুগল প্লে থেকে “SaveME999” অ্যাপটি ডাউনলোড করতে। বার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়, জরুরি লাইনের অপব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য। NG999 একটি সমন্বিত ডিজিটাল সিস্টেম, যা জরুরি কল সেন্টার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য ও সম্পদ ভাগাভাগি আরও উন্নত করে। ফলে জরুরি সেবার কার্যক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বাড়বে। গত বছরের ১ জুলাই, ডেপুটি কমিউনিকেশনস মন্ত্রী তেও নি চিং জানান, নতুন এই সিস্টেমে ওয়েব-ভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপিং, কলার আইডি, জিওলোকেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্মার্ট মোবাইল অ্যাপসহ আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দেশের যেকোনো স্থানে আরও কার্যকর জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, MERS999-এর তুলনায় NG999-এর কভারেজ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে এখন সারাদেশে ৮০০–রও বেশি স্থানে সম্প্রসারিত হয়েছে। — বারনামা
হিজরি তারিখ লোড হচ্ছে...
তারিখ লোড হচ্ছে...
ঢাকা, বাংলাদেশ
সময় লোড হচ্ছে...
বর্তমান সময়
| নামাজ | সময় | অবস্থা |
|---|
বর্তমান নামাজ: লোড হচ্ছে...
গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন তর্ক তুঙ্গে, তখন খুব বেশি শব্দ না করেই নিজেদের অবস্থান শক্ত করে ফেলেছে হামাস। যুদ্ধবিরতির পরদিই দেখা যায়—ইসরাইল সেনারা যে অঞ্চলগুলো ছাড়ছে, সেসব জায়গায় প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে টহল দিচ্ছে হামাসের সদস্যরা। গাজার অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজও এখন তাদের হাতেই। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, কর আদায়, শুল্ক নির্ধারণ—সবই চলছে হামাসের নির্দেশনায়। স্থানীয়দের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা নয়; বরং সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরাই দায়ী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন। তাদের মতে, পণ্যের উপর কর বসিয়ে এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে হামাস, আর তাই তারা কোনোভাবেই চাইছে না দলটি আবারো সরকার পরিচালনা করুক। অন্যদিকে গাজা থেকে হামাসকে সরানো বা নিরস্ত্র করার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এক অবস্থানে থাকলেও এর বিরোধিতা করছে রাশিয়া, চায়না এবং কয়েকটি আরব রাষ্ট্র। পশ্চিমাদের পছন্দ মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন বা আন্তর্জাতিক কোনো অন্তর্বর্তী সরকার—যেমন টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে। কিন্তু এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক শক্তি মানতে নারাজ। মাঠের বাস্তবতা বলছে—ইসরাইল দুই বছর ধরে গাজার ৮০ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল। যুদ্ধবিরতির পর তাদের অবস্থান সরে এলেও এখনো প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকা তাদের দখলে। বাকি ৪৭ শতাংশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ, যাদের জীবনযাত্রা পরিচালিত হচ্ছে হামাসের কাঠামোর ভেতরেই। ২০০৭ সালে ফাতাহ ও মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন থেকে গাজার ক্ষমতা নেয় হামাস। তারপর থেকে অঞ্চলটির প্রশাসন, নিরাপত্তা এবং বাজারব্যবস্থার সব ক্ষেত্রই ধীরে ধীরে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও দলটির কাঠামো এখনো সক্রিয়। নিহত চার গভর্নরের জায়গায় নতুন চারজনকে নিয়োগ দিয়েছে তারা, আর সরকারি কর্মচারীরাও প্রতি মাসে বেতন পেয়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন—হামাস স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, গাজাকে ঘিরে যে কোনো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণ তাদের বাইরে রেখে তৈরি করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক টানাপোড়েন যত বাড়ছে, তাদের অবস্থান ততই আরও দৃঢ় হয়ে উঠছে।
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। দুই পক্ষের দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের কারণে সঠিক হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি, তবে সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ বলে জানা গেছে। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানায়, বুধবার ভোরে বেলুচিস্তান সীমান্তে তালেবান বাহিনী পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর বড় ধরনের আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষটি স্পিন বোলদাকের নিকটবর্তী সীমান্ত অঞ্চলে শুরু হয়। পাক নিরাপত্তা বাহিনী কয়েক ঘণ্টার তীব্র লড়াইয়ের পর হামলাটি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান যোদ্ধারা চারদিক থেকে একযোগে হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা ভাঙার উদ্দেশ্যে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা জবাবে ১৫ থেকে ২০ জন তালেবান নিহত হয় এবং কয়েকজন আহত অবস্থায় আফগানিস্তান সীমান্তের ভেতরে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানায়, সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি “নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তেজনাপূর্ণ”। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সীমান্ত সংলগ্ন প্রধান সড়কগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং মাঝে মাঝে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে, তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণের পর তালেবান যোদ্ধারা পাল্টা হামলায় “পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়”। তিনি বলেন, তালেবান বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে এবং কয়েকটি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। মুজাহিদ আরও অভিযোগ করেন, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ১২ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত ও প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন। তবে তার এই দাবিগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং ইসলামাবাদ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সীমান্ত উত্তেজনার সর্বশেষ উদাহরণ। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, আফগানিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, নতুন এই সংঘর্ষ দুই প্রতিবেশীর ইতোমধ্যেই নাজুক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তারা বলেন, সীমান্তে সহিংসতা চলতে থাকলে বাণিজ্য, মানবিক সহায়তা এবং সীমান্ত পারাপারে নির্ভরশীল বেসামরিক জনগণের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা ইসলামাবাদ ও কাবুল উভয় পক্ষকেই আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা যোগাযোগ চ্যানেল পুনরায় চালু করে এবং যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। নতুবা সীমান্ত অঞ্চলের এই অস্থিতিশীলতা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গাজা সিটিতে হামাস নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র দঘমুশ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বৃহৎ সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার পর এটি গাজার সবচেয়ে ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চোখো দেখা সাক্ষীরা জানান, গাজা সিটির জর্ডানিয়ান হাসপাতালের কাছে মুখোশধারী হামাস যোদ্ধারা দঘমুশ গোত্রের যোদ্ধাদের সঙ্গে গুলি বিনিময় করেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং সশস্ত্র সদস্যদের আটক করতে তীব্র লড়াই শুরু করে। মন্ত্রণালয় জানায়, “একটি সশস্ত্র মিলিশিয়ার হামলায়” তাদের আট সদস্য নিহত হয়েছেন। চিকিৎসা সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, শনিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে দঘমুশ পরিবারের ১৯ সদস্য ও হামাসের আট যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। চোখো দেখা সাক্ষীরা বলেন, দক্ষিণ গাজা সিটির তেল আল-হাওয়া এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়, যখন ৩০০-র বেশি হামাস যোদ্ধা একটি আবাসিক ভবন ঘিরে ফেলে, যেখানে দঘমুশ পরিবারের সশস্ত্র সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ভারী গুলিবর্ষণের মধ্যে বহু পরিবার ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় — যাদের অনেকেই যুদ্ধ চলাকালীন একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। একজন বাসিন্দা বলেন, “এইবার মানুষ ইসরায়েলি হামলা থেকে নয়, নিজেদের লোকের কাছ থেকে পালাচ্ছিল।” দঘমুশ পরিবার গাজার অন্যতম প্রভাবশালী গোত্র, যাদের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। এর আগেও তাদের মধ্যে একাধিকবার সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করছে এবং সতর্ক করেছে যে “প্রতিরোধের কাঠামোর বাইরে কোনো সশস্ত্র কর্মকাণ্ড” কঠোরভাবে দমন করা হবে। উভয় পক্ষ একে অপরকে সংঘর্ষ শুরু করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। হামাসের দাবি, দঘমুশ পরিবারের বন্দুকধারীরা তাদের দুই সদস্যকে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার পর তারা অভিযান চালাতে বাধ্য হয়। তবে দঘমুশ পরিবারের এক সূত্র স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, হামাস বাহিনী গাজা সিটির প্রাক্তন জর্ডানিয়ান হাসপাতাল ভবনে আসে, যেখানে দঘমুশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল— কারণ তাদের আল-সাবরা এলাকার বাড়িগুলো সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই সূত্রের দাবি, হামাস ওই ভবনটি নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরিবারটিকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিল। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর হামাস প্রায় ৭,০০০ নিরাপত্তা সদস্যকে আবার মোতায়েন করেছে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। খবরে আরও জানা গেছে, হামাসের সশস্ত্র ইউনিটগুলো ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় মোতায়েন হয়েছে— কেউ বেসামরিক পোশাকে, আবার কেউ গাজা পুলিশের নীল ইউনিফর্মে। তবে হামাসের গণমাধ্যম দপ্তর দাবি করেছে, “রাস্তায় কোনো যোদ্ধা মোতায়েন করা হয়নি।”
টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশন আয়োজিত নূরানী স্কলারশিপ ২০২৫ পরীক্ষার কার্যক্রম আজ(১৮নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইল, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহের আংশিক মিলিয়ে মোট ২৫টি উপজেলায় ধাপে ধাপে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মোট ৮ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আজ মঙ্গলবার প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ভূঞাপুর উপজেলার আসাদুজ্জামান খান দারুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে। সকাল ৯টায় পরীক্ষা শুরু হয়। উপজেলার বিভিন্ন নূরানী মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষক ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হাফেজ মাওলানা মাহফুজ রহমান, সভাপতি শেখ মাহদী হাসান শিবলী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি রবিউল ইসলাম ও গোপালপুর উপজেলার জিম্মাদার মাওলানা নোমান আহমেদ। তারা পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি ও পরিবেশ পরিদর্শন করেন। উপদেষ্টা হাফেজ মাওলানা মাহফুজ রহমান বলেন, “২০১৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এ স্কলারশিপ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষায় শিশুদের আগ্রহ বাড়াতে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।” সভাপতি শেখ মাহদী হাসান শিবলী বলেন, “মানসম্মত পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি আমাদের লক্ষ্য। অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ।” এক অভিভাবক জানান, স্কলারশিপ পরীক্ষা শিশুদের পড়াশোনায় উৎসাহ তৈরি করছে। ২০১৭ সাল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল, শিক্ষা উপকরণ ও সম্মাননা ক্রেস্টসহ বিভিন্ন পুরস্কার দিয়ে আসছে ফাউন্ডেশন। এ বছরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জাতীয় খতিব আব্দুল মালেক সম্প্রতি প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করেছেন, কাদিয়ানী পণ্য যেমন আরেফেল ও প্রাণসহ বিভিন্ন নামে বাজারে থাকা পণ্যগুলো বর্জন করা, পরিত্যাগ করা এবং এগুলো থেকে দূরে থাকা মুসলিমদের জন্য ফরজ। তিনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঈমানী বিষয়, এবং মুসলিমদের করণীয় হলো নিজেদের ঈমান এবং ইসলামের পরিচয় রক্ষা করা। আবদুল মালেক বলেন, কাদিয়ানীরা ইসলামের কোনো গন্ডির মধ্যে পড়ে না, তাই তাদের পণ্য বা মতবাদকে মাযহাবের এখতেলাফ বা ফেরকার মধ্যে রাখা যায় না। তিনি সাংবাদিক, প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা কাদিয়ানীদের পণ্য প্রচার বা বাজারজাতের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে আমানতদারীর সাথে এ বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করবে। তিনি আরও বলেন, মুসলিমদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, কোনো ধরনের প্রতারণা বা ধোঁকার শিকার না হতে হবে, এবং কাদিয়ানীদের পণ্য থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে নিজেদের ঈমান এবং ইসলামের পরিচয় রক্ষা করতে হবে। নির্দেশনা: মুসলিমরা কাদিয়ানী পণ্য বর্জন করবে। প্রশাসন ও সাংবাদিকরা সচেতনভাবে এ বিষয়টি উপস্থাপন করবে। ব্যবসায়ীরা কাদিয়ানীদের পণ্য বাজারজাত বা উৎপাদন এড়াবে। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট ঈমানী দায়িত্ব এবং আব্দুল মালেকের কথায় এটি গুরুত্বসহকারে পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ভুঞাপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে নবগঠিত কমিটির পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১০টায় উপজেলার দেওয়ান বাড়ি বাহাতুন্নেসা হাফিজা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তেলাওয়াত করেন হাফেজ ক্বারী মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ভুঞাপুর উপজেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা মাহ্ফুজুর রহমান (দা.বা.)। সভায় প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল— সমাজে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করণীয়, আহলে হক উলামায়ে কেরামদের ঐক্য সুদৃঢ় করা এবং সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও সুসংগঠিত করার দিকনির্দেশনা। বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ে ইসলামবিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন “ইসকন”-এর আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তারা আরও বলেন, আলেম ওলামাদের হক কথা বলার ক্ষেত্রে বা মসজিদের খেদমতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে হেফাজতে ইসলাম ভুঞাপুর উপজেলা শাখা যেন পাশে দাঁড়াতে পারে। সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুফতি শহিদুল ইসলাম ভূঞাপুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মুনজুরুল হাসান, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা সালিম আহমাদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি আল আমিন কাসেমী, সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা শফিউর রহমান, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুস সালাম, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোল্লা হযরত আলী, মুফতি আবু ইউসুফ, সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল কাদের, মাওলানা মাহদী হাসান শিবলী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ আল হুসাইন, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মুফতি সোহাইল হাসান এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাব্বির আহমাদ প্রমুখ। সর্বশেষে নবগঠিত কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শহীদুল্লাহ্ আন্দিপুরী (দা.বা.)। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি হাফেজ মাওলানা মাহ্ফুজুর রহমান (দা.বা.)।
মাওলানা মুমতাযুল করীম [বাবা হুযুর] আমার জানা মতে ১৯৪২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার ডুলিপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাদাসিধে আল্লাহওয়ালা এবং দরবেশ সিফাতের মানুষ ছিলেন। দ্বীনের প্রতি তার দরদ অপরিসীম। বাংলাদেশের প্রায় সকল মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে এবং বড় বড় ইসলামী সম্মেলনে তিনি আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত হতেন। ধর্মপ্রাণ মানুষ তার সারগর্ভ আলোচনা শোনার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষা করতেন। তাঁর আলোচনা ছিল সংক্ষিপ্ত এবং ব্যাপক অর্থবোধক। মাওলানা মুমতাযুল করীম (বাবা হুযুর) নিজ এলাকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান 'বটোগ্রাম হামীদিয়া মাদরাসা'য় শিক্ষা-জীবন শুরু করেন অতঃপর ফেনী শর্শদী মাদরাসায় কিছুদিন পড়াশোনা করে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। হাটহাজারী মাদরাসায় কয়েক বছর লেখাপড়া করার পর জামি'আ ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন। দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করে উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ১৯৬৩ ঈ. সালে পাকিস্তান গমন করেন। পাকিস্তানের বিখ্যাত মাদরাসা 'জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর' থেকে তাফসীর এবং আদব (আরবী সাহিত্য) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে এসে সর্বপ্রথম ময়মনসিংহের 'কাতলাসেন কাদেরীয়া কামিল মাদরাসা'য় মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তবে বেশিদিন সেখানে ছিলেন না। একই বছর ১৯৬৫ ঈ. সনে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন এবং সেখানে মুসলিম শরীফের দারস প্রদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকা আশরাফুল উলূম বড়কাটারা মাদরাসায় সাত বছর মুহাদ্দিস হিসেবে খেদমত করে চট্টগ্রামের আল-জামি'আতুল ইসলামীয়া পটিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পটিয়া মাদরাসায় তিনি টানা সাত বছর কৃতিত্বের সাথে পাঠদান করেন। ১৯৮৪ ঈ. সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান করেন। হাটহাজারী মাদরাসায় অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতির সঙ্গে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। হাটহাজারী মাদরাসায় অধ্যাপনাকালে শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বাবা হুযুর নামে পরিচিত হওয়া ও বাবা হুযুর নামের উৎপত্তি: তিনি বাবা হুযুর নামে পরিচিত। বাবা নামে তাঁকে সবাই ডাকে। তবে এই নামের উৎপত্তি কোথায়, কীভাবে তিনি 'বাবা হুযুর' নামে প্রসিদ্ধ হলেন—অনেকেরই অজানা। ১৯৮৫ ঈ. সন। হুযুরের নিকট আমাদের দারছে নিযামীর আরবী সাহিত্য ও শে'র এর কিতাব—'নাফহাতুল আরব' ও 'ক্বাসীদাহ বুরদাহ' পড়ার সুযোগ হয়েছিল। মাওলানা মাহমুদ বাঁশখালী (যিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন), মাওলানা আতাউল্লাহ (বর্তমান মুহতামিম: হেমায়েতুল ইসলাম কৈগ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম), মাওলানা মুহাম্মদ গড়দুয়ারী (বর্তমান শিক্ষক: দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা), মাওলানা মুহাম্মদ আলী চারিয়া এবং আমি লেখক এক জামাতের ছাত্র। বাবা হুযুরের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল গভীর। ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক। বাপ-বেটার সম্পর্ক। আমাদের 'ক্বাসীদাহ বুরদাহ' দারছ দেয়ার সময় তিনি এক ছাত্রকে বেত্রাঘাত করলে এক পর্যায় ঐ ছাত্র 'ও বাবা, ও বাবা' করে চিৎকার করতে থাকে। তখন বাবা হুযুর বেত্রাঘাত না করে হাসতে থাকেন এবং পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে ঐ ছাত্রকে হাদিয়া দেন। সেদিন থেকে যখন তিনি কোনো ছাত্রকে বেত্রাঘাত করতেন ছাত্ররা 'বাবা' বলে ডাক দিলে তিনি আর মারতেন না। এভাবে শুরু হয়ে গেল বাবা ডাকা-ডাকি। বাবা হুযুর নামের প্রসিদ্ধ হওয়ার আরো কাহিনী আছে— হাটহাজারী মাদরাসার বড় মসজিদে ফজরের নামাযের পর শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রাহ. জামি'আর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় জরুরী কথাবার্তা বলতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নাসিহা পেশ করতেন। অনেকসময় নাসিহা শুরু করার পূর্বে চট্টগ্রামের ভাষায় বলতেন—'ওয়া! মৌলভী মুমতায আছোনি?' তিনি জানতেন আর কেউ না থাকলেও বাবা হুযুর প্রথম কাতারে আছেন। উত্তরে বাবা হুযুর বলতেন—'লাব্বাইক, আছি হুযুর'। প্রায় সময় এরকম দৃশ্য আমরা দেখতে পেতাম। একদিনের ঘটনা—ফজরের নামাযের পর অন্যান্য দিনের ন্যায় শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রাহ. বলে উঠলেন— 'বাবা হুযুর আছোনি?' উস্তাযের মুখে বাবা ডাকা শুনে পকেট থেকে ৫০০ টাকার দুটি নোট বের করে উস্তাদের হাতে তুলে দিলেন বাবা হুযুর। তখন শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রাহ. মজা করে পুনরায় বাবা হুযুর বলে ডাক দিলে বাবা হুযুর আরও দুটি ৫০০ টাকার নোট হুযুরের হাতে দিয়ে বলতে লাগলেন—'আজকে আর বাবা ডাকবেন না, পকেটে আর টাকা নেই'। মসজিদে উপস্থিত ছাত্র ও মুসল্লিদের মধ্যে ছাত্র ওস্তাদের এই দৃশ্য দেখে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। মূলত ওদিন থেকেই বাবা হুযুর নামটি সব ছাত্রদের মুখে মুখে হয়ে গেল। বাবা ডেকে আমরা তাঁর কাছ থেকে কত টাকা ছিনিয়ে নিয়েছি তার কোনো হিসেব নেই। এ ঘটনার পর থেকে তিনি বেত্রাঘাত ছাড়াও বাবা ডাকলে খুশী হতেন এবং কিছু টাকা হাদিয়া দিতেন। যেহেতু হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তাই তিনি দেশব্যাপী ‘বাবা হুযুর’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। একজন শিক্ষকের জন্য এর চেয়ে পরম পাওয়া আর কী আছে! ১৯৮৪ ঈ. সাল থেকে টানা ৩৫ বছর (২০১৯ ঈ.পর্যন্ত) তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক থাকাকালীন ঢাকা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন এবং 'বুখারী শরীফ' সহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবের দারছ প্রদান করেছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি দারছ প্রদান থেকে অনেকটা অক্ষম হয়ে পড়েন এবং এক পর্যায়ে হাটহাজারী মাদরাসা ছেড়ে ঢাকা নিজ বাসভবনে অবস্থান করতে থাকেন। কিন্তু হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষকদের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তাঁর নির্ধারিত বেতন-ভাতা যথারীতি অব্যাহত ছিল। চরমোনাই মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কিছুদিনের মধ্যেই চরমোনাই পীর মরহুম মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক রাহ. মাওলানা মুমতাজুল কারিমকে অত্যাধিক স্নেহ ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত করে মেয়ে সাইয়্যিদা হূরুন্নিছা বেগমকে তার সথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর সংসার জীবন শেষে বাবা হুযুরের প্রিয়তমা স্ত্রী (মাওলানা মাহমুদুল হাসান মুমতাযীর মুহতারামা মা) ১৯৯৫ ঈ.তে ইন্তিকাল করেন। অতপর ১৯৯৬ ঈ.তে বাবা হুযুর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সদা সুন্নতের ওপর অটল, বিশিষ্ট বুযুর্গের আমল-আখলাকের কথা সর্বজনবিদিত। অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায়ও কেউ তাকে দেখতে গেলে হাদিয়া দেওয়ার কথা ভুলতেন না। গত ২৯.১১.'২১ঈ. তারিখে আমি অধম তাঁর সাথে সাক্ষাত ও দু'আ নেয়ার জন্য তার ঢাকাস্ত বাসায় গেলে মুমূর্ষু অবস্থায়ও তিনি আমার হাতের মুঠোয় পাঁচশত টাকার কচকচে একটি নোট গুঁজে দেন। তার দেয়া হাদিয়ার টাকা আজও আমি আলমিরাতে সংরক্ষণ করে রেখেছি। তিনি সুন্নতের খেলাফ কোনো কিছু দেখলে খুব রেগে যেতেন। সুন্নাহর উপর আমল করা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। দুনিয়ার বুকে আমরা অনেক দরবেশ-বুযুর্গ, পীর-মাশাইখ ও জ্ঞানী-গুণীর দেখা পাই। কিন্তু কথা ও কাজে মিল রেখে জীবন পরিচালনা করেছেন এমন ব্যক্তি পাওয়া সত্যিই দূর্লভ। মাওলানা মুমতাযুল করীম বাবা হুযুর ছিলেন সম্পুর্ণ এর বিপরীত। ইসলামের প্রচার-প্রসার, কুরআনের তাফসীর, ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদসহ নানা দ্বীনী কাজে তিনি দেশের আনাচে-কানাচে চষে বেড়িয়েছেন। অংশ নিয়েছেন সভা-সমিতি, ওয়ায মাহফিল, জনসভা ও ইসলামী সম্মেলনে। একাধিক দেশও ভ্রমণ করেছেন। তন্মধ্যে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, লন্ডন, থাইল্যান্ড, চীন, হংকং, কুয়েত, কাতার, বাহারাইন, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত ও মায়ানমার অন্যতম। শেষ জীবনে শারিরীকভাবে অসুস্থ হলেও উম্মাহর চিন্তায় সদা ব্যাকুল ছিলেন তিনি। উম্মাহর কল্যাণে তিনি অনেক কাজ করেছেন। শুধু হাদীসের খিদমাত ও ওয়ায মাহফিল নয়, লেখালেখির ময়দানেও মাওলানা মুমতাযুল কারীম বাবা হুযুর রাহ.র অবদান রয়েছে। সুলুক ও তাসাউ্উফের মেহনতও তিনি করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম হাকীমুল ইসলাম মাওলানা কারী তায়্যিব রাহ.র নিকট বাই'আত গ্ৰহণ করেন। পরবর্তীতে পীরে কামেল মাওলানা মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান এলাহাবাদী (বখশিবাজারী) তাকে চিঠির মাধ্যমে চার তরিকায় খেলাফত প্রদান এবং বায়াত করার অনুমতি দেন। এছাড়া দারুল মা‘আরিফ চট্টগ্রামের তদানীন্তন শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা ইহসানুল হক রাহ. তাকে লিখিতভাবে খেলাফত প্রদান করেন এবং খানকায়ে এহসানিয়া প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেন। ২০১৭ সালে মাহবুবুল উলামা হযরত মাওলানা পীর জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী মুজাদ্দেদীও তাকে খেলাফত প্রদান করেন। তার রচিত গ্রন্থাবলীর অন্যতম হলো— • বোখারি শরিফের উর্দূ ব্যাখ্যাগ্রন্থ হাবিবুল বারী শরহিল বোখারি, • আরবী কাওয়াইদে ফিকহিল হানাফি • তারিখুত তাফসির, • কোরআন-হাদিসের অমূল্য রত্ন, • পরকালে মুক্তি কিসে? (অনুবাদ), • উলুমুল কুরআন, • এসো কোরআনের অর্থ শিখি, • আকিদায়ে খতমে নবুওয়ত, • রায়বেন্ডের দশদিন (অনুবাদ) ও • আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা। এছাড়া বিভিন্ন মাসিক পত্রিকা, স্মরণিকা ও স্মারকগ্রন্থে তার অনেক লেখা প্রকাশ হয়েছে। মাওলানা মুমতাযুল কারীম বাবা হুযুরের উস্তাযদের অন্যতম হলেন— শায়খুত তাফসীর ওয়াল ফুনুন আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী রাহি., শাইখুল হাদীস আল্লামা মুহাম্মদ সরফরায খান সফদর রাহ., উস্তাযুল-কুল শাইখুল মাশায়েখ আল্লামা রাসূল খান রাহ. ও শাইখুল ফালসাফা মাওলানা গোলাম গাওছ হাজারভী রাহ., বাংলাদেশের মীর সাহেব হুযুরখ্যাত শাইখুল উলূম ওয়াল ফুনূন, রঈসুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আমীর হুসাইন রাহ., শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাহ., আল্লামা আনওয়ারুল আযীম রাহ., শাইখুল হাদীস মাওলানা নূরুল ইসলাম শর্শদীর হুযুর রাহ.। বাবা হুযুর বাংলদেশের সদর সাহেব হুযুরখ্যাত মুজাহিদে আযম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রাহ. এর সান্নিধ্যও পেয়েছেন। ১৯৬৭ ঈ.র দিকে তিনি গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় গেলে সদর সাহেব হুযুর তাকে সাথে করে নিয়ে পুরো মাদরাসা ঘুরিয়ে দেখান এবং ছাত্রদের দরস দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশের বড় বড় আলেমদের সান্নিধ্য তিনি পেয়েছেন। তিনি যাদের সান্নিধ্য পেয়েছেন তাদের অন্যতম হলেন— মুফতীয়ে আযম মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ. ও পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতী আযীযুল হক রাহ.। তিনি সারাজীবন দ্বীনের আলো, হাদীসের বাণী, সুন্নতের দাওয়াত ও কুরআনের আওয়াজকে বুলন্দ করার মিশন নিয়ে কাজ করেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন নিজ হাতে গড়া ছাত্রদের নিয়ে, তারা যেন প্রকৃত আলিম ও দ্বীনের দা'ঈ হয়ে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। হাটহাজারী মাদরাসায় আমার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হওয়ার ব্যপারে যাদের পরামর্শ ও অবদান রয়েছে মাওলানা মুমতাযুল কারীম বাবা হুযুরও তাদের একজন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। সাদাসিধে যিন্দেগি ও সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। সত্য-সুন্দরের পথে, আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লামের প্রদর্শিত জীবনের পথে জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছিলেন।পার্থিব কোনো লোভ-লালসা তাকে কখনো বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি, তার স্বচ্ছতা ও সততার বিষয়টি শত্রু-মিত্র, পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে সর্বমহলে প্রশংসিত। সততার এই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সবার জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। রাব্বে কাইনাতের দরবারে আমাদের বিনীত প্রার্থনা—মহান আল্লাহ তা'আলা তার জীবনের খাত্বা-কসূর ক্ষমা করে তাকে যেন জান্নাতের আ'লা মাকাম দান করেন! আমীন ! বাবা হুযুরের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল সুগভীর। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, বহির্বিশ্বের সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বাবা হুযুরের সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। তার সাথে রয়েছে অনেক স্মৃতি; কিছু স্মৃতি মজার, কিছু স্মৃতি শিক্ষার। এসব লিখতে গেলে একটি ভলিয়ম হয়ে যাবে। তবে এতটুকু আজকের এই সংক্ষিপ্ত লেখায় বলা যায়— সফরে-হযরে দেশে-বিদেশে বাবা হুযুরের কোনোদিন তাহাজ্জুদ ক্বাযা হয়েছে বলে অন্তত আমার জানা নেই। বাসে-বিমানে-রেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায প্রথম ওয়াক্তে তিনি আদায় করতে ভুলে যাননি কখনো। আজ ২৮ মার্চ ২০২৩ ঈ. হাটহাজারী মাদরাসার মাঠে হাজার হাজার মুসল্লিদের উপস্থিতিতে এবং মারহূমের সাহেবযাদা মাওলানা মাহমুদুল হাসান মুমতাযীর ইমামতিতে তাঁর নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে মারহূমের দু' সহকর্মী হযরত মাওলানা শামছুল আলম (মুহাদ্দিস: হাটহাজারী মাদরাসা) ও মাওলানা হারূন যফর রাহ. (মুহাদ্দিস: হাটহাজারী মাদরাসা) এর পাশে বাবা হুযুরকে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল বিরাশি বছর। — আশরাফ আলী নিজামপুরী (বারাকাল্লাহু ফি হায়াতীহি)
মোস্তফা মাসুদ: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা যেন একদিনেই মরুভূমির দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। দিনব্যাপী পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের পর একসময়ের জমজমাট বাজার, ফিলিং স্টেশনসহ অসংখ্য ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থানে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ আর শূন্যতা। যেখানে প্রতিদিন মানুষের ভিড়, পণ্য উঠানামা ও ব্যবসায়িক লেনদেন চলত, আজ সেখানে কেবল ভাঙা টিন, বেঁকে যাওয়া কাঠ, ছড়িয়ে থাকা ইট-পাথর আর নির্জন নিস্তব্ধতা। উচ্ছেদের পর স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলেন, বহু বছরের পরিশ্রম, স্বপ্ন ও স্থিতিশীল জীবনের ভরসা মুহূর্তের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কারও দোকান ছিল সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস, কেউবা নিজের হাতে গড়া ছোট ব্যবসাটিই ছিল জীবনের সম্বল। অভিযানের পর তারা এখন দিশেহারা। এদিকে অভিযানে বড় ধরনের বৈষম্য ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ উচ্ছেদকর্মে অর্থনৈতিক লেনদেন ও প্রভাবশালীদের ইঙ্গিত অনুযায়ী কিছু স্থাপনা রক্ষা পেলেও সাধারণ মানুষের দোকান-ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, পুনর্বাসন বা বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এমন আকস্মিক উচ্ছেদ বহু মানুষের জীবিকা বিপন্ন করে তুলেছে। তারা সরকারের কাছে মানবিক বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ন্যায্য তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অভিযান পরবর্তী কালিগঞ্জ এখন ভাঙা স্থাপনার শুকনো ধুলোয় ঢেকে থাকা এক নিশ্চুপ জনপদ।যেখানে মানুষের চোখে কেবল শূন্যতা আর ভাঙাগড়ার তীব্র বেদনা।
মোস্তফা মাসুদ: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার উত্তর শ্রীপুরের বাগে জান্নাত হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রাঙ্গণে রবিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৫) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। সার্জিকাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং এম.বি.বি.এস (এস. ইউ. এস.টি) সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ তৈয়বুর রহমান এবং ডা. ফারহানা তাসনিমের সহযোগিতায় আয়োজিত এই মানবিক উদ্যোগে সকাল থেকেই ভিড় জমায় এলাকার শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ মানুষ।দিনব্যাপী চিকিৎসা সেবার অংশ হিসেবে প্রদান করা হয় সাধারণ রোগ, চর্মরোগ, শিশুরোগ, নারীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা, প্রাথমিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যপরামর্শসহ নানা সেবা। উপস্থিত রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে ওষুধও বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার সেক্রেটারি রুহুল আমিন, সহ-সভাপতি হামিদুল ইসলাম, ক্যাশিয়ার জাহাঙ্গীর আলম, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সুপার হাফেজ মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, নির্বাহী সদস্য মোবারক আলী ও মোকসেদ সরদার।এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সার্জিকাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আব্দুস সালাম, গ্রাম্য ডাক্তার আবুল কাশেম ও খায়রুল আনামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। চিকিৎসাসেবা দিতে আসা চিকিৎসকরা জানান,সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এ ধরনের ক্যাম্প অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানান, সামনের দিনগুলোতেও অসহায়, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য এমন বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নিয়মিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা আরও বলেন, “মানবতার সেবা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সমাজের সহায়শীল সবাই এগিয়ে এলে এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত করা সম্ভব।” এ ক্যাম্পকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা যায় গভীর সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা।মানবিক এই উদ্যোগ স্থানীয় পর্যায়ে প্রশংসার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মোস্তফা মাসুদ: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের থালনা দক্ষিণপাড়ায় এক অসহায় পরিবারের ওপর চরম হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় এক চিটার ও মামলাবাজ চক্রের নেতৃত্বে চলছে এই অমানবিক নির্যাতন। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন কুখ্যাত প্রতারক কার্তিক চন্দ্র সরকার—যিনি তার সহযোগীদের নিয়ে নিরীহ ও গরিব গাজী পরিবারকে বারবার মিথ্যা মামলা ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে বিপর্যস্ত করে তুলেছেন। থালনা দক্ষিণপাড়ার ইউসুফপুর গ্রামের আলী বাক্স গাজীর দুই ছেলে আকিম গাজী (৩৬) ও তকিম গাজী (৩৮) বহু বছর ধরে সরকারি পজিশন জমিতে একটি ছোট টিনের ঘর ও সিমেন্ট পাইপের ছাউনি দেওয়া ছাপড়া ঘরে বসবাস করে আসছেন। এই জায়গায় বসবাসের জন্য তারা এক সময় স্থানীয়দের পরামর্শে টাকা দিয়ে বসবাসের অনুমতি পান। কিন্তু পরবর্তীতে কার্তিক চন্দ্র সরকার পুনরায় অর্থ দাবি করলে গাজী পরিবার তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেই থেকেই শুরু হয় একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ, মামলা ও ষড়যন্ত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,“থালনা দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন শ্মশান ঘাট ও শ্রীশ্রী তারকনাথ বাবার ধাম কমিটি”র নাম ব্যবহার করে কার্তিক চক্র বিভিন্ন সময় এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি প্রশাসনের কাছে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে পরিবারকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করারও চেষ্টা চালায়। সরজমিনে গেলে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ। ভাঙা টিনের টুকরো, সিমেন্ট পাইপের ভাঙা অংশ আর কান্নায় ভেজা এক পরিবার—এই যেন প্রতারণার এক বাস্তব চিত্র।পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আমরা কারও জায়গা দখল করিনি, বৈধভাবে এখানে ছিলাম। হঠাৎ একদিন উচ্ছেদের নামে আমাদের মাথার ওপরের ছাউনিটা পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হলো। এখন আমরা পথে বসে আছি।স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনি, আজিজুর রহমান, জয়ন্ত কুমার ও নজরুল ইসলাম জানান “এই পরিবার শান্তিপ্রিয় ও পরিশ্রমী মানুষ। চিটার কার্তিক চন্দ্র সরকার ও তার দলবল টাকার লোভে পড়ে এই পরিবারটিকে উচ্ছেদ করিয়েছে। প্রশাসন যেন প্রকৃত সত্য যাচাই করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। অভিযোগ রয়েছে, গত ১০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে গাজী পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু অভিযুক্তদের প্রভাব ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে প্রকৃত সত্য যাচাই ছাড়াই অভিযানটি পরিচালিত হয়।স্থানীয়রা দাবি করেন,“চিটার কার্তিক চন্দ্র সরকার ও তার মামলাবাজ চক্রকে আইনের আওতায় আনা না হলে, তারা আরও নিরীহ পরিবারকে একইভাবে সর্বস্বান্ত করবে। এলাকাবাসী প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে তদন্ত ও অবিলম্বে চিটার কার্তিক চন্দ্র সরকারসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন,ন্যায়বিচার পেলে শুধু একটি পরিবারই নয়, পুরো এলাকা প্রতারক ও মামলাবাজদের হাত থেকে মুক্তি পাবে।এ বিষয়ে অসহায় দিনমজুর আকিম গাজী ও তকিম গাজী তারা বলেন" চাম্পাফুল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম সহ একাধিক ব্যক্তি বিষয়টি জানেন এই চিটার কার্তিক চন্দ্র আমার কাছে এই পজিশনের সরকারি জায়গাটি বিক্রি করে টাকা নিয়ে তারপরে আবারো টাকার দাবি করেন। আমি দিতে অস্বীকার করাই ,আমার নামে মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দিতে থাকেন বিষয়টি স্থানীয় এলাকাবাসী ও জানেন। এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়, ফলে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মোস্তফা মাসুদ: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের চিংড়িখালিতে মিথ্যা মামলা দায়ের, ভুমিহীন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অপ-প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ভূমিহীন জনপদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতশত ভুমিহীন নারী পুরুষের অংশগ্রহনে এ মানববন্ধনে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে আতঙ্ক সৃষ্টি, সন্ত্রাস, মাদক বিস্তারসহ এলাকায় ত্রাসের রাজত্বে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী মামলাবাজ সাইদুল ও সাত্তারের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে। উপজেলার নলতা ইউনিয়নের চিংড়িখালিতে ভূমিহীন নেতা শহিদুল ইসলাম, মধু সরদারসহ তাদের একান্ত সহযোগীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, নানান ষড়যন্ত্র ও অপ-প্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১লা নভেম্বর) বিকেলে চিংড়িখালি বৈরাগীর চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে বসুখালী বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে মানববন্ধনে অংশ নেন চিংড়িখালি ভূমিহীন জনপদের প্রায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। মানববন্ধনে উপস্থিত জনতা একক কণ্ঠে সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভূমিহীন জনপদের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভুমিহীন জনপদের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম গাজী, সহ- সভাপতি আব্দুল হালিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বুল্লা, উপদেষ্টা আবুল হোসেন গাজী, সদস্য মধু সরদার, কুতুব মোড়ল, শওকত হাজী, গোলাপ ঢালী, মজিবার, রফিকুল ইসলাম, আরিজুল সরদার, ভুমিহীন নেত্রী নুরবানু, জাহানারা, শামসুন্নাহার ও মমতাজ প্রমুখ। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, আশাশুনি উপজেলার বসুখালী গ্রামের মৃত আব্দুল হক গাজীর ছেলে মাদক সম্রাট ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাইদুল ইসলাম গাজী (৪৭) এবং নলতা ইউনিয়নের কাজলা কাশিবাটি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মাদকসেবী শেখ সাত্তার (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। এরা ভূমিহীন ও অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে ভয় সৃষ্টি করে, চাঁদা দাবি করার পাশাপাশি নলতার জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানসহ অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জড়ানো, মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনসহ এলাকায় দুঃশাসন কায়েম করে অশান্ত করার পায়তারা করে আসছে। বক্তারা আরও বলেন, বিগত সরকারের সময়ে এদের বিরুদ্ধে মাদক, নারী কেলেঙ্কারি ও চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ অভিযোগ থাকলেও প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে থেকেছে। এরা আজও রয়েছে বহালতবিয়তে ও বেপরোয়া হয়ে। তারা বৈরাগীর চক, চিংড়িখালি, বসুখালী, সন্ন্যাসীর চক ও ঝায়ামারিসহ আশপাশের এলাকায় তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। ভূমিহীন জনপদের নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,“অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে আতঙ্ক সৃষ্টি করা সন্ত্রাসীদের আর ছাড় দেয়া হবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিথ্যা মামলা, চাঁদাবাজি ও মাদকের বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ব। ”বক্তারা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মাদক-সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। একই সাথে তিন শতাধিক ভুমিহীনের শেষ সম্বল যায়গাটুকু ফেরত পেতে সরকার বাহাদুরের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। এছাড়াও চিংড়িখালির শান্তি স্থাপন ও ভূমিহীনদের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে জনতার এই জাগরণ এখন পুরো কালিগঞ্জের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
শরীয়তপুরে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ; তদন্তে ভিন্ন তথ্য বলছে পুলিশ শরীয়তপুরে পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন—এমন অভিযোগ সামনে এলে তা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনার ভিন্ন চিত্র পেয়েছে বলে জানিয়েছে। অভিযোগকারী তরুণী নিজেকে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিলেও পুলিশ বলছে—তিনি কলেজ শিক্ষার্থী নন। বরং তদন্তে জানা গেছে, ওই নারীর বিয়ে হয়েছে এবং তার দুইটি সন্তান রয়েছে। পালং মডেল থানা পুলিশ জানায়, তরুণী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গিয়ে ফেরার পথে তাকে কেউ মারধর করেছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হাবিবুর রহমান বলেছেন, তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। এছাড়া মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ওই তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমকে তরুণী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা শহরের বনবিভাগ কার্যালয়ের পাশের নির্জন এলাকায় কয়েকজন যুবক তাদের পথরোধ করে। এ সময় তার সহপাঠীকেও আটক রেখে মারধর করা হয় এবং মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তরুণীর দাবি, তাকে তিন যুবক পালাক্রমে ধর্ষণ করে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখে। সহপাঠীর বর্ণনাও প্রায় একই। তিনি বলেন, বাস না পেয়ে তারা হাঁটছিলেন। দুই যুবক ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের ভিতরে নিয়ে যায়। তাকে মারধর করে টাকা দাবি করা হয় এবং বান্ধবীকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয়। তরুণী আরও অভিযোগ করেছেন, তাকে টেনে নেওয়ার সময় দুইজন নারী ঘটনাটি দেখলেও কোনো সহায়তা করেনি। এছাড়াও ঘটনাস্থল এলাকায় কিছু কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেননি। স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন জানান, তিনি বাসায় ফেরার সময় দেখতে পান কয়েকজন যুবক এক মেয়েকে নিয়ে বনবিভাগের দিক থেকে বের হচ্ছে। মেয়ে আতঙ্কে কিছু বলতে পারছিল না। সঙ্গী ছেলেটির ইশারায় তিনি সন্দেহ করেন। তাদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে যুবকরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ে ঘটনাটি খুলে বলে।ওসি শাহ আলম বলেন,ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে গেছি। কিন্তু তরুণী আমাদের কাছে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে। প্রাথমিক তদন্তেও ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। তারপরও বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বহুতল ভবনে বোরকা পরে বাসায় প্রবেশ করে মা–মেয়েকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে নতুন নিয়োগ পাওয়া গৃহকর্মী। সোমবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিট থেকে ৯টা ৩৬ মিনিটের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত দুইজন হলেন লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। পুলিশ জানায়, চারদিন আগে গৃহকর্মী হিসেবে ‘আয়েশা’ নামে পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় কাজ নেয় মেয়েটি। ঘটনার দিন বোরকা পরে বাসায় ঢুকে মা–মেয়েকে হত্যার পর নাফিসার স্কুলড্রেস ও মুখে মাস্ক পরে বেরিয়ে যায় সে। সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে তার প্রবেশ ও বের হওয়ার দৃশ্য।নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম, উত্তরা সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক,সকাল ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তিনি ফিরে এসে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লায়লা আফরোজের মৃতদেহ উদ্ধার করে, আর নাফিসাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়সকাল ৭:৫১ মিনিট: বোরকা পরা গৃহকর্মী আয়েশা বাসায় প্রবেশ করে।সকাল ৯:৩৬ মিনিট: স্কুল ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে আসে।ভবনের সামনে থেকে রিকশায় ওঠে এবং দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।তল্লাশিতে বাথরুম থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটার ছুরি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এসব দিয়েই মা–মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। ডাইনিং রুমে থাকা ইন্টারকমের তার খুলে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে,মনে হচ্ছে নাফিসা কাউকে ফোন করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়।বাসার ভেতরে রক্তের দাগ, ধস্তাধস্তির চিহ্ন, তছনছ করা আলমারি ও ব্যাগ পাওয়া গেছে। নিহত লায়লা আফরোজের মোবাইল ফোনও নেই। শিক্ষক আজিজুল ইসলাম জানান, চার দিন আগে কাজের খোঁজে একটি মেয়ে গেটে আসে। দারোয়ান খালেক তাকে বাসায় পাঠান। মেয়েটি নিজেকে ‘আয়েশা’ বলে পরিচয় দেয় এবং জানায় তার গ্রামের বাড়ি রংপুর, বাবা–মা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, আর সে জেনেভা ক্যাম্পে চাচা–চাচির সঙ্গে থাকে। তার শরীরেও পোড়ার দাগ দেখা যায়।ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন ,দুজনের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত রয়েছে। হত্যাকারী ঘটনাস্থলে বাথরুমে ফ্রেশ হয়েছে,এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।’’গৃহকর্মীর পরিচয় ও পলায়নের পথ চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। দারোয়ান মালেককে জিজ্ঞাসাবাদে রাখা হয়েছে
টাঙ্গাইলে চোর সন্দেহে পরকীয়া প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম হাসমত উল্লাহ হাসু। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— রাশেদুল ইসলাম (৩৬), গ্রামনাহালি, মহেড়া ইউনিয়ন, মির্জাপুর। ইয়ামিন ইসলাম (৩২), একই গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, প্রবাসী রাশেদুল ইসলামের স্ত্রী নিশি বেগমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে জামালপুরের বকশীগঞ্জের হাসমত উল্লাহর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হাসু টাঙ্গাইল সদরের আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। রাশেদুল দেশে ফেরার পরও হাসু নিশির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। পরে স্বামী–স্ত্রী মিলে হাসুকে দেখা করতে আসতে বলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নিশির সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাশেদুল, ইয়ামিন ও মেহেদী হাসু কে চোর সন্দেহে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের ভাই রহমত উল্লাহ ছয়জনকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাশেদুল ও ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক জাবেদ পারভেজ বলেন, “দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।” মির্জাপুর থানার ওসি মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান, “পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে হত্যাচেষ্টা মামলায় অপসারিত কাউন্সিলর শামীম খান গ্রেপ্তার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক (অপসারণকৃত) ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের উপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। বুধবার রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মির্জাপুর থানা পুলিশ তাকে উপজেলার একটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মির্জাপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের পাহাড়পুর নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত শামীম খান মির্জাপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিলো বলে জানিয়েছেন মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদ ফজল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ আগস্ট শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের কয়েকজনসহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জোবায়েদ ইসলাম নিঝুম। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী ছিলেন শামীম খান। মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্রেপ্তারকৃত শামীমকে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেশের সকল পৌরসভার কাউন্সিলরদের অপসারণ করলে শামীম কাউন্সিলরশীপ হারান। থানা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার দিন শামীম খান নেতৃত্বাধীন কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রতিপক্ষের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানায়, শামীম খান দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন। পাশাপাশি অপসারণের কারণে তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ থেকেও বহির্ভূত হন। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ বলছে, মামলার অন্যান্য আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ভালো বীজ, আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার এবং অনুকূল আবহাওয়ার ফলে টাঙ্গাইলে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ পর্যন্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। পরিবার থেকে পাড়া—গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এ খুশির বার্তা। তবে তারা বাজারে আমন ধানের ন্যায্যমূল্য প্রত্যাশা করছেন। অগ্রহায়নের শুরু থেকেই টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা রোপা আমন কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৬৩ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। মাঠে চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর ব্যস্ততা—কিষাণী থেকে কৃষক সবাই এখন সময় দিচ্ছেন নতুন ধান ওঠানোর কাজে। টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় রোপা আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ দুই হাজার হেক্টর। সরকারি প্রণোদনা, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ ও কৃষকদের আগ্রহের কারণে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৫৮৩ হেক্টরে।উপজেলা ভিত্তিক আবাদ: সদর: লক্ষ্যমাত্রা ৫,৪০০ হেক্টর; আবাদ ৫,৪০৫ হেক্টর বাসাইল: ৩৯০ হেক্টর; আবাদ ৩৯২,কালিহাতী: ৮,০৩০ হেক্টর; আবাদ ৮,৪৬৫,ঘাটাইল: ১৮,০৪০ হেক্টর; আবাদ ১৯,৪৯০,নাগরপুর: ২,৫১০ হেক্টর; আবাদ ৩,২০১,মির্জাপুর: ৪,৮৫০ হেক্টর; আবাদ ৪,৮৪৮,মধুপুর: ১৩,০০০ হেক্টর; আবাদ ১৩,০০২,ভূঞাপুর: ৬,২৩০ হেক্টর; আবাদ ৬,১০৫,গোপালপুর: ১২,৯০০ হেক্টর; আবাদ ১৩,০০০,সখীপুর: ১৭,২৬০ হেক্টর; আবাদ ১৭,২৬৫,দেলদুয়ার: ৩,৪৩০ হেক্টর; আবাদ ৩,৪৬০,ধনবাড়ী: লক্ষ্যমাত্রা ৯,৯৬০ হেক্টর; আবাদ ৯,৯৫০। কালিহাতীর সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে ধান কাটার উৎসব। আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ভালো খড় পাওয়ার জন্য এখনো ৮০–৮৫ শতাংশ কৃষক হাতে ধান কেটে মেশিনে মাড়াই করছেন। উঠানে উঠানে নতুন ধানের স্তুপ জমতে শুরু করেছে; কিষাণীরা ব্যস্ত দম ফেলার ফুরসত নেই। কৃষকদের ভাষ্য, গত বছর বিঘাপ্রতি ১৪–১৬ মণ ধান পেলেও এবার পাওয়া যাচ্ছে ১৮–২০ মণ। ভালো বীজ, জমি প্রস্তুত থেকে মাড়াই পর্যন্ত আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার—সব মিলিয়ে ফলন বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবও ছিল। ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাসে অনেক ধান জমিতে লুটিয়ে পড়ে—এর ফলে কিছু চিটা ধান দেখা গেছে। এরপরও বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ২–৪ মণ ধান পেয়ে কৃষকরা সন্তুষ্ট। কৃষকদের আশা, বাজারে আমন ধানের দাম ভালো থাকলে তারা এবার লাভবান হবেন। অন্যথায় উৎপাদনপ্রবণতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ জানান,“ফিল্ড লেভেলে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা এবং বীজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের ফলে এ বছর রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে এবং ফলন হয়েছে আশানুরূপ। ইতোমধ্যে উৎপাদিত ধানের প্রায় ৬৩ শতাংশ কাটা শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই পুরো জেলায় ধান কাটার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”তিনি আরও জানান, "এ বছর জেলায় হাইব্রিড ও উফশী জাতের পাশাপাশি কিছু এলাকায় স্থানীয় জাতের ধানও চাষ হয়েছে। রোগবালাই তুলনামূলক কম থাকায় সব জাতেই ভালো ফলন এসেছে।"
[জুমার বয়ান : ২৬-১০-১৪৪৬ হি., ২৫-৪-২০২৫ ঈ.] [বয়ানটি আলোচকের নযরে সানী ও সম্পাদনার পর পাঠকের সামনে পেশ করা হল। প্রসঙ্গের প্রয়োজনে এতে কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে। –সম্পাদক] গত জুমায় হজ্ব সম্পর্কে কিছু কথা হয়েছিল। আজকের আলোচনাও হজ্বের প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সামনে আসায় সেটি নিয়ে কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ। কুরআন কারীমে সূরা বাকারায় হজ্ব প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, যখন তোমরা হজ্বের কাজসমূহ সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহর যিকির করবে। হজ্ব পালনকারী ব্যক্তি ইহরাম বেঁধে মিনা হয়ে আরাফায় যাবে। আরাফা থেকে মুযদালিফায় আসবে। মুযদালিফা থেকে আবার মিনায় গিয়ে ১১-১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত (দুই দিন বা ১৩ যিলহজ্বসহ তিন দিন) অবস্থান করবে। সেখানে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করবে। এই পবিত্র স্থানগুলো দুআ কবুলের জায়গা। এসব স্থানে কী দুআ করবে– সেটিও আল্লাহ তাআলা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। দুআটি আমাদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গেও খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন– فَاِذَا قَضَیْتُمْ مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ اَوْ اَشَدَّ ذِكْرًا فَمِنَ النَّاسِ مَنْ یَّقُوْلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا وَمَا لَهٗ فِی الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ، وَمِنْهُمْ مَّنْ یَّقُوْلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّفِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ، اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ نَصِیْبٌ مِّمَّا كَسَبُوْا وَاللهُ سَرِیْعُ الْحِسَابِ. তোমরা যখন হজ্বের কার্যাবলি শেষ করবে, তখন আল্লাহকে সেভাবে স্মরণ করবে, যেভাবে নিজেদের বাপ-দাদাকে স্মরণ করে থাক; বরং তার চেয়েও বেশি স্মরণ করবে। কিছু লোক তো এমন আছে, যারা (দুআয় কেবল) বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ায় দান করুন। আখেরাতে কিন্তু তাদের কোনো অংশ নেই। আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দান করুন, দুনিয়ায়ও কল্যাণ এবং আখেরাতেও কল্যাণ এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। এরা এমন লোক, যারা তাদের অর্জিত কর্মের অংশ (সওয়াবরূপে) লাভ করবে। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। –সূরা বাকারা (০২) : ২০০-২০২ হজ্বের কাজগুলো সমাপ্ত করে মিনায় অবস্থানকালে আল্লাহর যিকির করবে। যেমন তাকবীরে তাশরীক– اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، وَلِلهِ الْحَمْدُ. এই সময় তাকবীরে তাশরীকের যিকিরসহ অন্যান্য যিকিরও করবে। আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর যিকির কর এবং আল্লাহকে স্মরণ কর, তোমাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের স্মরণের মতো। ইসলামপূর্ব যুগে মক্কার মুশরিকসহ অন্যান্য বেদ্বীনরাও হজ্ব করার জন্য মক্কা মুকাররমায় যেত। বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা যেহেতু তাওহীদের শিক্ষা হারিয়ে ফেলেছিল, সেহেতু তাদের হজ্ব তাওহীদের হজ্ব ছিল না; ছিল শিরকের হজ্ব। এমনকি হজ্বের মধ্যে তাওহীদের যে তালবিয়া– لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيكَ لَكَ. –সেটি পর্যন্ত তারা পরিবর্তন করে ফেলেছিল। ওই সময় তারা নিজেদের মতো করে হজ্ব সম্পন্ন করার পর নিজেদের পূর্ব পুরুষদের বাস্তব-অবাস্তব যাবতীয় গুণকীর্তন ও প্রশংসা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের তাওহীদের হজ্ব শেখাচ্ছেন। সেখানে এ নির্দেশনাও দিচ্ছেন যে, হজ্ব সমাপ্ত করার পর কেবল আল্লাহর যিকির কর। আগে যেমন পূর্বপুরুষ ও বাপ-দাদার চর্চা করতে, অন্তত ততটুকু যিকির তো আল্লাহর জন্য করবে; বরং তার চেয়ে বেশি কর– اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، وَلِلهِ الْحَمْدُ. মুমিন ও কাফেরের প্রার্থনার পার্থক্য যিকিরের প্রধান ও প্রথম সারির প্রকারগুলোর মধ্যে দুআ অন্যতম। সেই দুআর ধরন কেমন হবে, তা-ও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। কিছু লোক আছে, যাদের চিন্তা, স্বপ্ন, প্রার্থনা সবকিছু কেবল দুনিয়া ও ইহজগতকে কেন্দ্র করে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন– فَمِنَ النَّاسِ مَنْ یَّقُوْلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا. কিছু লোক তো বলে, মালিক, আমাদের কেবল দুনিয়া দান করুন! দুনিয়াতে সুখে রাখুন! ইহজগতের সকল সুখ দান করুন! ব্যস, আখেরাতের কোনো আলাপ নেই। আখেরাতের জন্য তাদের কোনো প্রার্থনা নেই। আল্লাহ বলছেন– وَ مَا لَهٗ فِی الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ. ‘আখেরাতে তার কোনো অংশ নেই।’ অর্থাৎ তার নিজেরই যেহেতু আখেরাত নিয়ে কোনো ভাবনা নেই, তাই আখেরাতে তার কোনো অংশও নেই। পক্ষান্তরে তাওহীদে বিশ্বাসী মুমিন বান্দাদের দুআ কেমন সেটাও আল্লাহ তাআলা বলেছেন– رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّفِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ. অর্থাৎ আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন! আখেরাতেও কল্যান দান করুন! দুনিয়াতেও যেন আমরা সুখে-শান্তিতে থাকতে পারি! আপনার নেক বান্দা হয়ে থাকতে পারি! আর আখেরাতেও যেন শান্তি ও নিরাপদে থাকতে পারি! এককথায় আমরা আপনার নিকট দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতের কল্যাণ কামনা করি এবং দোযখের আগুন থেকে পানাহ চাই! আল্লাহ তাআলা বলছেন– اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ نَصِیْبٌ مِّمَّا كَسَبُوْا وَ اللهُ سَرِیْعُ الْحِسَابِ. তাদের আমল অনুযায়ী তাদের জন্য আখেরাতে বড় অংশ থাকবে। আর আল্লাহ অনেক দ্রুত হিসাব নিতে পারেন। কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কে আল্লাহর কাছে কেবল ইহজগতের কল্যাণ চেয়েছিল আর কে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের কল্যাণ চেয়েছিল– সেই হিসাব নিতে আল্লাহর কোনো সময় লাগবে না। তিনি অনেক দ্রুত সমস্ত হিসাব সম্পন্ন করতে সক্ষম। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং দেখেন। ভাইয়েরা আমার! আমরা মুমিন, মুসলিম। আমরা তো আল্লাহর নিকট দুনিয়া-আখেরাত উভয়টাই চাই। বরং আমাদের দুনিয়াও নিছক দুনিয়া নয়, মূলত তা আখেরাতের প্রস্তুতির জন্য। আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাস ও উদাসীনতা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ সূরা ইউনুসেও আল্লাহ তাআলা বলেন– اِنَّ الَّذِیْنَ لَا یَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِیْنَ هُمْ عَنْ اٰیٰتِنَا غٰفِلُوْنَ، اُولٰٓىِٕكَ مَاْوٰىهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ، اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ یَهْدِیْهِمْ رَبُّهُمْ بِاِیْمَانِهِمْ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْاَنْهٰرُ فِیْ جَنّٰتِ النَّعِیْمِ، دَعْوٰىهُمْ فِیْهَا سُبْحٰنَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِیَّتُهُمْ فِیْهَا سَلٰمٌ وَاٰخِرُ دَعْوٰىهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ. নিশ্চয়ই যারা (আখেরাতে) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট ও তাতেই নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলি সম্পর্কে উদাসীন— নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। (অপরদিকে) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের ঈমানের কারণে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে এমন স্থানে পৌঁছাবেন যে, প্রাচুর্যময় উদ্যানরাজিতে তাদের তলদেশ দিয়ে নহর বহমান থাকবে। তাতে (প্রবেশকালে) তাদের ধ্বনি হবে এই যে, হে আল্লাহ! সকল দোষ-ত্রুটি থেকে আপনি পবিত্র এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। আর তাদের শেষ ধ্বনি হবে এই যে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। –সূরা ইউনুস (১০) : ৭-১০ এখানে আল্লাহ তাআলা বলেন, যাদের আমার সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো আশা নেই বা বিশ্বাস নেই এবং তারা দুনিয়ার জীবনকেই সবকিছু মনে করে, মৃত্যুর পরে কবর থেকে যে জগৎ শুরু হয়, হাশর-নশর, আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে যাদের বিশ্বাস নেই, তাদের পরিণতি জাহান্নাম। তেমনিভাবে যাদের বিশ্বাস আছে, কিন্তু মনোযোগ ও গুরুত্ব নেই। অর্থাৎ আরেকটা জগতের বিষয়ে জানা আছে, কিন্তু সেই জগতের বিষয়ে কোনো তৎপরতা ও প্রস্তুতি নেই, ভাবখানা এমন, সবাই যেহেতু বলছে মৃত্যুর পরের জগতের কথা, কিছু একটা না থাকলে তো আর বলার কথা না! এভাবে একধরনের জানা আছে, কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি ও তৎপরতা নেই। তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। আয়াতের উপস্থাপনায় যারা পরকালকে বিশ্বাসই করে না এবং যারা মোটামুটি একধরনের বিশ্বাস হয়তো করে, কিন্তু আচরণে তার কোনো প্রকাশ নেই, উভয় শ্রেণির লোকদের কথাই এসে যায়। তারপর বলা হয়েছে– وَرَضُوْا بِالْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ اطْمَاَنُّوْا بِهَا. অর্থাৎ দুনিয়া নিয়েই তারা সন্তুষ্ট এবং মনটাও তার ওপর স্থির ও প্রশান্ত। অর্থাৎ দুনিয়া ঠিক তো সব ঠিক! দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত, আখেরাতের কোনো ভাবনা নেই। وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَنْ اٰیٰتِنَا غٰفِلُوْنَ. আর তারা আল্লাহর দেওয়া কুরআনের আয়াত সম্পর্কে গাফেল। তাঁর স্থাপনকৃত কুদরত ও হেদায়েতের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন। তাদের ঠিকানা ও পরিণতির কথা আল্লাহ বলছেন– اُولٰٓىِٕكَ مَاْوٰىهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ. অর্থাৎ তাদের হাতের কামাই অনুযায়ী তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। কারণ আখেরাত বিষয়ে তাদের কোনো গুরুত্বই ছিল না। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, হিসাব দিতে হবে, এই ভাবনাই তাদের ছিল না; বরং দুনিয়া নিয়েই ছিল ব্যস্ত। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন– اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ یَهْدِیْهِمْ رَبُّهُمْ بِاِیْمَانِهِمْ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْاَنْهٰرُ فِیْ جَنّٰتِ النَّعِیْمِ. অর্থাৎ যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের ঈমানের বরকতে আল্লাহ তাআলা তাদের সঠিক পথ দেখাবেন। ফলে দুনিয়ায় থেকে তারা আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। আর আখেরাতে গেলে জান্নাত পাবে। এখানে আল্লাহ তাআলা ভাগ করে দিয়েছেন। যার ভাবনা কেবল ইহজগৎ তার ঠিকানা ও পরিণতি কী। আর যার ভাবনা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টা এবং সে দুনিয়ার কল্যাণও চায় আখেরাতের লক্ষ্যে, যেখানে দুনিয়া পেতে হলে আখেরাত ছাড়তে হয়– সে সেখানে কখনো দুনিয়ার দিকে ধাবিত হয় না; বরং আখেরাতকে প্রাধান্য দেয়– তার ঠিকানা ও পরিণতি কী– তাও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন : স্পষ্ট আল্লাহদ্রোহিতা ও শরীয়তদ্রোহিতা কুরআনের এই শিক্ষা এবং ইসলাম ও ইসলামী শরীয়তের এই মৌলিক আকীদা মাথায় রেখে একটু ভাবতে পারি, আমাদের বর্তমান অবস্থা কী? সবাই ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, আমাদের প্রধান উপদেষ্টার নিকট নারী বিষয়ক সংস্কারের প্রতিবেদন জমা হয়েছে। যারা এই প্রতিবেদন ও প্রস্তাবনা পেশ করেছেন, তারা একদিক থেকে তো ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত যে, তারা স্পষ্টভাষী। কারণ কোনো রাখঢাক করেননি তারা; বরং তাদের ভেতরে যা আছে তা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন। কোনো মুসলিম রাষ্ট্র কি কেবল ইহজাগতিক হতে পারে? একটি দৃষ্টান্ত দেখুন। প্রতিবেদনের ৩৫নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘যেহেতু রাষ্ট্র একটি ইহজাগতিক সত্তা, সেহেতু কোনো ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে সংবিধান শুরু হওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া, একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। তাই অনুচ্ছেদ ২ক বাতিল করা প্রয়োজন।’ তাদেরকে বলা হয়েছে, নারী বিষয়ক সংস্কারের প্রস্তাবনা, মতামত ও পরামর্শ জমা দেওয়ার জন্য, তারা সেখানে দিয়ে বসল রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের মূলনীতি সম্পর্কে প্রস্তাবনা! বলল, আমাদের রাষ্ট্র হল ইহজাগতিক! নাউযুবিল্লাহ! কোনো মুসলিম দেশ কি কেবল ইহজাগতিক হতে পারে? হওয়া সম্ভব? আমাদের দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং তা যুগ যুগ ধরেই আছে। যাদেরকে এদেশ থেকে সবাই মিলে বের করে দিয়েছে তারাও এটা বাদ দেয়নি বা দিতে পারেনি; কিন্তু এই কমিশন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এটা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করছে! এই রাষ্ট্র নাকি ইহজাগতিক, নাউযুবিল্লাহ! একথা একাধিক জায়গায়ই বলেছে। ২৪০নং পৃষ্ঠায় আছে, ‘রাষ্ট্র হবে ইহজাগতিক এবং মানবিক!’ অর্থাৎ রাষ্ট্র হবে কেবল দুনিয়াকেন্দ্রিক, যেখানে আখেরাত সংক্রান্ত কিছুই থাকবে না। যাদের সবকিছু দুনিয়া কেন্দ্রিক, তাদের ঠিকানা কোথায় হবে– একটু আগেই আমরা কুরআনে দেখলাম। সুতরাং আমরা কি আমাদের দেশ ও সমাজের জন্য এমন কিছু চাই? চাইতে পারি? কখনোই না। আরও বলছে ‘মানবিক’! আরে, যেটা কেবল ইহজাগতিক হয়, সেটা মানবিক হওয়া কখনো সম্ভব নয়। মানবতা কোত্থেকে আসবে? আপনাকে ‘মানবিক’ হতে হলে তো আপনার মধ্যে সর্বপ্রথম আখেরাতমুখিতা ও পরকাল ভাবনা থাকতে হবে। আখেরাতের ফিকির যার নেই, সে কখনো মানবতা বাস্তবায়ন করতে পারে না এবং পারবেও না। এই যে দুই কথাকে একসঙ্গে মিলিয়ে দিল যে ‘রাষ্ট্র হবে ইহজাগতিক এবং মানবিক’ এটা কি পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়? ইহজাগতিক হলে সেটি কখনোই মানবিক হতে পারে না; বরং সম্পূর্ণ অমানবিক। মানবিক বানাতে হলে সেটিকে অবশ্যই আখেরাতমুখী ও আল্লাহমুখী বানাতে হবে। বলতে হবে– لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيكَ لَكَ. اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، وَلِلهِ الْحَمْدُ. একজন মুমিনের ন্যায় বলতে হবে– سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا. আল্লাহ, আমরা আপনার বিধান শুনেছি, তা গ্রহণ করেছি এবং মেনে নিয়েছি। আবারো বলছি, তারা কিন্তু স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তাদের কাছে রাষ্ট্র হল সম্পূর্ণ ইহজাগতিক ও দুনিয়াকেন্দ্রিক! এর মধ্যে আখেরাত, ঈমান-আমল ও দ্বীন-শরীয়তের কিছু পাওয়া যাবে না। সুতরাং যার কাছে ঈমান-আমল ও আখেরাতের গুরুত্ব নেই, সে এটা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু যার কাছে কুরআন-হাদীস, ঈমান-আমল, ইসলামী শরীয়ত ও আখেরাতের গুরুত্ব আছে, সে এটা কখনো গ্রহণ করতে পারে না। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট বার্তা : ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে নবীজীর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ্ই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আপনাদের জানার কথা, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরীতে জগনণের উদ্দেশে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের সীরাত বিষয়ক একটি বাণী ও বার্তা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন তওহিদের মহান বাণী নিয়ে। সব ধরনের কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার, পাপাচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তি, শান্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়ে অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং সত্যের আলো জ্বালিয়েছেন। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার জন্য অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন, যা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারি হিসেবে পথ দেখাবে। আজকের দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে মহানবী (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ, তাঁর সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ এবং (আল্লাহর) ইবাদতের মাধ্যমেই বিশ্বের শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে বলে আমি মনে করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’ আমি আমাদের সরকারকে অনুরোধ করব, যেহেতু নবীজীর এই সীরাতই হল সবকিছুর সমাধান, তাই নারী উন্নয়ন চান আর নারী অধিকার চান, সবই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত থেকে গ্রহণ করুন! কুরআন ও হাদীস থেকে গ্রহণ করুন। তার জন্য আপনাকে আলাদা কোনো কমিশন বানাতে হবে না। ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে আমাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন আছে, ফাউন্ডেশনকে বলুন। আপনাকে সর্বোচ্চ সুন্দর ও চমৎকার নারী উন্নয়ন নীতিমালা পেশ করে দিতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ; বরং পেশ করা আছেও। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সীরাত বিষয়ক যেমন বই লেখা আছে, নারী বিষয়েও যাবতীয় বিধিবিধান বই আকারে ছাপা আছে। আর কুরআন-সুন্নাহ ও নবীজীর সীরাত থেকে আপনাদেরকে যে কোনো সময়ই প্রস্তুত করে পেশ করা সম্ভব! সেটাকে বাস্তবায়ন করে দিন! দেখবেন, পুরো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শান্তিতে ও সম্মানে থাকবে আমাদের দেশের মা-বোনেরা! কিন্তু সরকার যাদেরকে এই কমিশনের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা কি আসলে এসব সূত্র থেকে নারী উন্নয়নের নীতি খোঁজ করেছেন? এদেশের নারীরা আসলে কী চান? তারা কীভাবে থাকতে সম্মানবোধ করেন? তারা তাদের কোন্ অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে চান? সর্বপ্রকার জুলুম-নির্যাতন ও বঞ্চনা থেকে তাদেরকে মুক্ত করার জন্য কোন্ পন্থাটি আসলে সঠিকভাবে কার্যকর– এই কমিশনের সদস্যগণ কি সত্যিই সেটি অনুধাবন করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা রাখেন? তাদের প্রতিবেদনটি দেখলে তো অন্তত তা বোঝা যায় না। পশ্চিমাদের পার্থিব উন্নতি অশ্লীলতা ও আল্লাহবিমুখতার কারণে নয় পশ্চিমাদের দাপট দেখে অনেকে মনে করে, সেখান থেকে আমাদের সবকিছু নিতে হবে। অথচ বোঝে না যে, পশ্চিমাদের জাগতিক উন্নতি ও অগ্রগতি তাদের অশ্লীলতা ও খোদাবিমুখতার কারণে নয়। যে কারণে তাদের জাগতিক অগ্রগতি, বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সে বিষয়ে তাদের থেকে আমাদের নেওয়ার কিছু নেই; বরং আমাদের কাছেই আছে তাদের চেয়ে অনেক উন্নত পথ ও পন্থা। আসলে আমাদেরগুলোই তারা গ্রহণ করেছে; ফলে তারা জাগতিক উন্নতি করছে। কাজেই নিজের ঘরেরটাই বাস্তবায়ন করে দেখুন, জাগতিক উন্নতি কীভাবে সাধিত হতে থাকে! তাদের জাগতিক উন্নতি দেখে ভাববার কোনো প্রয়োজন নেই যে, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার কারণে তারা উন্নতি করছে! বা তাদের জাহেলী সভ্যতার কারণে তারা উন্নতি করছে। আচ্ছা, তারা কি সুদের কারণে উন্নতি করছে? সেক্যুলারিজমের কারণে উন্নতি করছে? লিবারেলিজমের কারণে উন্নতি করেছে? সেক্যুলার শিক্ষা ও সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে অথবা নারী উন্নয়নের নামে যতসব বেহায়াপনা রয়েছে, সেগুলোর কারণে কিংবা লিবারেলিজমের অবাধ উশৃঙ্খল উন্মত্ত চাল-চলনের কারণে উন্নতি করছে তারা? কখনোই নয়। বরং বেহায়াপনা বিস্তার করে নিজেরা যেমন বরবাদ হয়েছে, অন্যদেরও বরবাদ করতে চাচ্ছে। পশ্চিমাদের পার্থিব উন্নতির মৌলিক দুটি কারণ আবারো বলছি, এগুলো পশ্চিমা বিশ্বের উন্নতির চালিকাশক্তি নয়! তাদের সামরিক শক্তি ও পার্থিব উন্নতির কারণ এসব নয়। বরং তার কারণ অন্য কিছু। মৌলিকভাবে দুটি : প্রথমত, মুসলিম উম্মাহর মাঝে ব্যাপকভাবে তাকওয়ার অভাব এবং শরীয়ত পালনে উদাসীনতা বেড়ে গেছে, যার কারণে আল্লাহ তাআলা এদের শক্তি তাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, আমাদের নবীজীর সীরাতের মধ্যে যেসব শিক্ষা রয়েছে, যেমন দুর্নীতি না করা, ধোঁকা ও প্রতারণা না করা, সততা ও সত্যবাদিতা গ্রহণ করা ইত্যাদি; তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নিজেদের বিশেষ কিছু গণ্ডিতে এই নীতিগুলোর চর্চা ধরে রেখেছে। এর পাশাপাশি তাদের মধ্যে রয়েছে পরিশ্রম, উদ্যম, পরিকল্পনা মাফিক কাজ, টিমওয়ার্ক, সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা এবং জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পারদর্শিতা, যা আমাদের খোলাফায়ে রাশেদীন ও খাইরুল কুরুনের যামানার বৈশিষ্ট্য ছিল। ফলে তারা জাগতিক উন্নতি লাভ করছে। তাদের জাগতিক উন্নতি এজন্য নয় যে, তারা সকল অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের জাগতিক উন্নতি এজন্যও নয় যে, তারা খোদাবিমুখতা ও আখেরাত বিমুখতা প্রদর্শন করে। সেজন্য আমাদের অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে সেখান থেকে কোনো কিছু ধার নিতে না যাই! বরং আমাদের নবীজীর সীরাত ও শরীয়তের মধ্যেই সব আছে। সেখান থেকেই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এই প্রতিবেদন জুলাই-আগস্টের শহীদদের সঙ্গে স্পষ্ট গাদ্দারি মনে রাখবেন, যদি এক্ষেত্রে আমরা ভুল করি এবং এই ধরনের অহেতুক ও পঁচা-গান্দা জিনিস এদেশে বাস্তবায়নের চিন্তা করা হয়, এটা হবে সবচেয়ে বড় জুলুম! এটা হবে সবচেয়ে বড় বেঈমানী! সবচেয়ে বড় খেয়ানত! জুলাই-আগস্টের শহীদদের সঙ্গে সবচেয়ে বড় গাদ্দারি! জুলাই-আগস্টের শহীদদের কথা বিশেষভাবে এজন্য বললাম, এই প্রতিবেদন পেশ করার সময় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেছেন, “জুলাইতে যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে”। নাউযুবিল্লাহ! আরে, যে জিনিসের মধ্যে জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হয়েছে, সেখানে বলছে, এটা নাকি তাদের স্মরণার্থে করা হয়েছে! এটা মুনাফেকী নয় কি? খবরদার, যে জিনিস শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি, সেটি তাদের স্মরণে করতে যাবেন না! বলেছেন ‘মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।’ অথচ এই প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, সেটা মানুষের জন্যও অকল্যাণকর, সমাজের জন্যও অকল্যাণকর। দেশের জন্যও অকল্যাণকর, সর্বোপরি এটি নারীদের জন্যও অকল্যাণকর। এর মধ্যে কল্যাণের কিছু নেই। সমতা নয়, চাই নারীর ন্যায্য অধিকার আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি এবং আখেরাতের প্রতি ঈমান আছে এমন কোনো নারী এ প্রতিবেদন মেনে নিবে না; মেনে নিতে পারে না। যদিও প্রতিবেদনে বারবার সমতা ও সমান অধিকারের জিগির তোলা হয়েছে। কিন্তু সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন পুরুষ-মহিলা সকলেই বোঝেন, যেখানে ভিন্নতা প্রযোজ্য ও ন্যায়সংগত সেখানে সমতার দাবি অন্যায়। বরং যে বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং ন্যায়সংগত তা হল ন্যায্য অধিকার। সেটা ক্ষেত্র বিশেষে দুই শ্রেণির জন্য সমানও হতে পারে, কম বেশিও হতে পারে। সব জায়গায় সমান করার দাবি যেমন অবাস্তব তেমনি অন্যায়। নারীর প্রতিও অন্যায়। যারই আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আছে, সেই বুঝতে সক্ষম– অধিকার তো যিনি খালেক, মালেক, রাব্বুল আলামীন, তিনিই নির্ধারণ করতে পারেন। কাজেই অধিকারের নাম ব্যবহার করে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করার অধিকার কারও নেই। অথচ এ প্রতিবেদনে এ কাজটিই হয়েছে। এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু যেমন কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী, তেমনি এটি বাস্তবতা বিরোধীও। এটি সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি ও সুস্থ রুচি বিরোধী। সর্বোপরি এটি হায়া-লজ্জা বিরোধী! মানুষের মধ্যে তো ন্যূনতম লজ্জাবোধ বলতে কিছু থাকে– সেই বিবেচনায়ও এই প্রতিবেদন প্রত্যাহারযোগ্য। এই প্রতিবেদনের দাবি হল, হায়া-শরম, লজ্জা জাতীয় শব্দগুলোই সমাজ থেকে বের করে দাও! নাউযুবিল্লাহ! এরা ‘শালীনতা’ ও ‘নৈতিকতা’ শব্দগুলোকেই বাদ দিতে চাচ্ছে আমাদের সংবিধানের ৩৯।(২) অনুচ্ছেদে শালীনতা ও নৈতিকতার কথা আছে। তারা বলে কী– এই অনুচ্ছেদ থেকে শালীনতা ও নৈতিকতার বিষয়টি বাদ দিয়ে দিতে হবে। অথচ আমাদের সংবিধান সংস্কার করা প্রয়োজন এজন্য যে, যদিও সেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, একথা লেখা আছে, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কথাও আছে; সেজন্য এর সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু এরা এসে সংবিধান থেকে ইসলামই বাদ দিয়ে দিতে চাচ্ছে! শালীনতা আর নৈতিকতার যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেটাও বাদ দিতে চাচ্ছে! শালীনতা ও নৈতিকতা যারা বাদ দিতে চায়, তারা কি আসলে নারীর উন্নয়ন চায়? প্রতিবেদনের ৩৫নং পৃষ্ঠায় প্রস্তাব করেছে– ‘(সংবিধানে) শব্দ প্রয়োগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। ... ‘গণিকাবৃত্তি’, ... শালীনতা, নৈতিকতা–’ শব্দসমূহের ব্যবহার পরিহার করা।’ তারা আরও বলেছে, অস্পষ্ট কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। ১৬২নং পৃষ্ঠায় তারা অস্পষ্ট পরিভাষা পরিহার করতে বলেছে এবং টীকায় অস্পষ্ট পরিভাষার উদাহরণ দিয়ে বলেছে, ‘অস্পষ্ট পরিভাষা যেমন, ‘নৈতিক অবক্ষয়’, ‘সুস্থ বিনোদন’, ‘জনস্বার্থ বিরোধী’, ‘অশ্লীল’, ‘ধর্মীয় অনুভূতি’। ‘রাজনৈতিক অনুভূতি’। ‘শালীনতাপূর্ণ পোশাক’।’ তারা বলছে, এসব পরিভাষা বিলুপ্ত করে দিতে! এতদিন আমাদের অভিযোগ ছিল, আপনারা ইসলামী শরীয়ত ও নবীজীর শিক্ষা পরিপূর্ণ গ্রহণ করুন। এই ধরনের অস্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করে কিছু মানবেন আর কিছু মানবেন না– এমনটা হয় না। কিন্তু এরা এসে প্রস্তাব করছে যে, এই শব্দগুলোই সংবিধান থেকে মুছে দাও! এই যে ‘নৈতিক অবক্ষয়’– এটা কত বড় আফসোসের বিষয়! এখন তারা শব্দটাই বাদ দিয়ে দিতে বলছে! ‘সুস্থ বিনোদন’ বলার দরকার কী? বরং যে কোনো বিনোদনের জন্য রাস্তা খুলে দাও! ‘জনস্বার্থ বিরোধী’ আবার কী জিনিস? মানুষের ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ ‘রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাত’ শব্দগুলো আমাদের দেশে খুব প্রচলিত। এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে কিছুটা হলেও আমরা নৈতিকতা ও শালীনতার বার্তা পেতাম এবং বিভিন্ন অপরাধকে এসব শব্দের আওতায় এনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাকড়াও বা প্রতিবাদ করার একটা সুযোগ থাকত। কিন্তু এখন এরা এসে বলে, এগুলোই বাদ দিয়ে দাও! দেখুন, কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে এরা! এরা শালীনতা ও নৈতিকতার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে দিতে চায়! এরা ‘শালীনতা’ আর ‘নৈতিকতা’কে বাদ দিতে বলে। অথচ এই হালকা হালকা শব্দগুলো দিয়ে কোনোরকমে একটু হলেও আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল, সেই কথাগুলোকেই তারা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করছে! এর মানে এরা শালীনতা ও নৈতিকতার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে দিতে চায়! কতটা জঘন্য দেখুন! কতটা কঠিন দুর্গন্ধযুক্ত এই প্রতিবেদন! এসবের পরেও পৃথকভাবে বলার প্রয়োজন আছে কি যে, এই প্রতিবেদনের কোন্ কোন্ অনুচ্ছেদ কুরআনবিরোধী, হাদীসবিরোধী? ইসলামী শরীয়তে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা, দৃষ্টির হেফাজত, সব ধরনের অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার যত নির্দেশনা এবং বিবাহ ও তালাক বিষয়ক, মিরাস, নসব তথা বংশ বিষয়ক, হিযানাহ তথা সন্তান লালন-পালন বিষয়ক যত বিধান ইসলামী শরীয়তে রয়েছে, তাদের প্রস্তাব হল এ সবকিছু বাদ দিয়ে দাও! এর মানে, তারা মুসলিম উম্মতকে দ্বীন-শরীয়ত, ঈমান-আখলাক এবং তাকওয়া-তাহারাত সবকিছু থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে বলছে। আল্লাহর শরীয়তের পরিবর্তে আল্লাহদ্রোহী ও আখেরাত বিমুখ সমাজের কৃষ্টি-কালচার গ্রহণ করতে বলছে। ঈমানের পরিবর্তে কুফুর, পবিত্রতার পরিবর্তে কলুষতা, পারিবারিক বন্ধনের পরিবর্তে লাগামহীনতা, হায়া-লজ্জার পরিবর্তে নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা এবং জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নাম খরিদ করতে বলছে। কাজেই যারা এই প্রতিবেদন সমর্থন করতে চায়, তাদের এর পরিণতি বুঝে-শুনে সমর্থন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, তাওহীদের এই যমীনে ঈমান-আখলাক বরবাদকারী এমন প্রস্তাবনা কখনো বাস্তবায়ন হবে না ইনশাআল্লাহ! বরং যারা বাস্তবায়ন করতে যাবে, তারাই বরবাদ হয়ে যাবে! তাদের দাবি হল, কেবল ইসলাম ধর্মই নয়, অন্য যতসব ধর্ম রয়েছে, সকল ধর্মের সবকিছু বাদ দিয়ে নতুন করে সবার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন বানাও! নাউযুবিল্লাহ! এদেরকে শরীয়ত পরিবর্তনের অধিকার কে দিল? প্রশ্ন হল, আপনাদেরকে শরীয়ত পরিবর্তন করে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি বানাবার দায়িত্ব কে দিয়েছে? ইসলামী শরীয়তে অন্য সকল বিষয়ের মতো এই বিষয়েও প্রয়োজনীয় হেদায়েত ও নির্দেশনা তো দেওয়াই আছে। শরীয়ত দেওয়ার মালিক তো একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কোনো মাখলুক অপর মাখলুকের জন্য শরীয়ত দিতে পারে না। আপনাকে শরীয়ত বানানোর দায়িত্ব তো দেওয়া হয়নি! আপনাকে একথা বলার জন্য তো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি যে, মুসলিমরা তাদের পারিবারিক আইন বাদ দেবে। হিন্দুরা তাদের পারিবারিক আইন বাদ দেবে, খ্রিস্টানরা নিজেদের পারিবারিক আইন বাদ দেবে! ব্যভিচার ও পতিতাবৃত্তিকে আইনি বৈধতা দেওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা যেটা করার কাজ সেটার খবর নেই, উল্টো পতিতাবৃত্তি, বিবাহ বহির্ভূত অবাধ যৌনতা, এলজিবিটির কর্মকাণ্ড কীভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যায়– সেই ধান্দায় আছে তারা। যৌনকর্মীদের কি ওভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন, না তাদেরকে পাপাচারের ঘৃণ্য পথ থেকে সরিয়ে সঠিক পথে এনে সম্মানজনক স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনবেন? তাদের জন্য যেটা করণীয়, সেটা না বলে তারা বলছে, ওরা পতিতালয়ে আছে, সেখানেই তাদের রাখা হোক এবং সেভাবেই তাদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হোক! বিষয়টা কি তাদের প্রতি ইনসাফ হল? বরং এটি তাদের প্রতিও না-ইনসাফী নয় কি? আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ১৮।(২) -এ বলা আছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ এই কমিশন দাবি করেছে, এই অনুচ্ছেদের ‘গণিকাবৃত্তির বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার নামে যৌনকর্মীদের পেশাকে নিরোধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’ আপনারা কী বলেন, যারা পতিতাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য কাজে জড়িয়ে গেছে, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসাটা মানবাধিকার, নাকি তাদেরকে সেই ঘৃণ্য কাজে রেখে দেওয়াটা মানবাধিকার? তাদেরকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে এনে সুস্থ ধারায় পুনর্বাসন করা সরকারের দায়িত্ব, সমাজের দায়িত্ব। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন উল্টো পতিতাবৃত্তিকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। কোনো শব্দও যদি এর পথে অন্তরায় হয় সেই ‘শব্দ’কেও দেশছাড়া করতে চাচ্ছে। ‘শালীনতা’ ‘নৈতিকতা’র মতো শব্দকেও সংবিধান থেকে বাদ দিতে বলছে। আর এটাও লক্ষণীয় বিষয় যে, ‘যিনা-ব্যভিচার’, ‘গণিকাবৃত্তি’, ‘ব্যভিচারিণী’ শব্দ বাদ দিয়ে ‘যৌনকর্ম’ ‘যৌনকর্মী’ শব্দ আমদানি করা হচ্ছে। যেন শব্দ থেকে এসমস্ত ঘৃণ্য কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি না হয়। এটাও এই ধরনের লোকদের একটি প্রতারণা। একদিকে এই নোংরা কাজকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছে, সেইসাথে শালীনতা, নৈতিকতা, হায়া-লজ্জাকে বাদ দিতে বলছে– এভাবে তারা এই সমাজকে কী পরিমাণ বরবাদ করতে চাচ্ছে– তা কি আর বোঝার বাকি থাকে? আরেকটি বিষয় দেখুন, প্রতিবেদনের দশম অধ্যায়ের শিরোনামটি লক্ষ করুন– ‘শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার’ একথা কারা বলে, কী মতলবে বলে, সেটা যারা বোঝেন, তাদেরকে তো কিছু বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। এরা শিক্ষা-পাঠ্যক্রমেও অশ্লীলতা ঢোকাতে চায় প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা ৭৪-এ বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা-পাঠ্যক্রম সংস্কারের মাধ্যমে সম্মতি বিষয়ে ধারণা, যৌন নির্যাতন ও হয়রানি কী... সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।’ হুবহু একই কথা পৃষ্ঠা ২০৬-এও বলা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন ইসলামের বিয়ের বিধান এবং যিনা-ব্যভিচার হারাম হওয়ার বিধানের জায়গায় তারা পশ্চিমা কুফরী কালচার ঢুকাচ্ছে। শব্দের মারপ্যাঁচে ট্রান্সজেন্ডারের বৈধতার অপচেষ্টা আরও শুনুন, এর মধ্যে ট্রান্সজেন্ডারের সবকিছু আছে; শব্দের মারপ্যাঁচে। আজকাল ট্রান্সজেন্ডারের যে ফেতনা চলছে, তার পুরোটাই এখানে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে; কেবল শব্দটা ব্যবহার করেনি। তদ্রূপ শব্দের মারপ্যাঁচে এলজিবিটি, সমকামিতা বলতে যা আছে এবং যত প্রকারের আছে, সবকিছুকে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে বৈধতা দেওয়া, বরং প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মোটকথা, অশ্লীলতার কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। এজন্যই তারা চাচ্ছে যে ‘অশ্লীলতা’ শব্দই বিলুপ্ত করে দেওয়া হোক! যেন আপনি অভিযোগ করতে না পারেন যে, ছি ছি, এমন অশ্লীল প্রস্তাব তারা কীভাবে দিল? যেন আমাদের অভিধান থেকেই শব্দগুলোকে বিদায় করে দিতে চাচ্ছে! অর্থাৎ পুরো ইসলামী শরীয়তের বিপরীতে একটা জিনিস দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটা মুসলিম উম্মতের ফয়সালা করার বিষয়। তারা কি ইসলামের শরীয়ত চায়? জান্নাত চায়? যদি চায়, তাহলে প্রস্তাবিত এই নীতিমালাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের চিন্তা হবে আত্মঘাতী! আর এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, একটি মুসলিম দেশে তাওহীদের যমীনে আমাদেরকে দেখতে হল সংস্কারের নামে আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআন-সুন্নাহ ও আল্লাহর দেওয়া শরীয়তের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি প্রতিবেদন এবং তা জাতির সামনে পেশও করা হল। আমাদের কাছে আফসোস প্রকাশেরও ভাষা নেই, নিন্দা জানানোরও ভাষা নেই। অন্য ধর্মের লোকদেরও চিন্তা করা উচিত। যদিও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য ধর্ম কেবল ইসলাম, কিন্তু অন্য ধর্মের লোকেরাও তো তাদের ধর্ম পালন করে থাকে। তাদেরকেও বলা হচ্ছে, তোমাদের ধর্ম নয়, বরং এখানে যে নীতিমালা প্রদান করা হবে, সেটাই মানবে! সুতরাং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা কী করবে, না করবে– সেটা তাদের বিষয়। যেসব ধর্মের কোনো গোড়া নেই এবং বাতিল ধর্ম, তারা তাদের ধর্মের বিষয়ে বিভিন্ন কম্প্রোমাইজ ও সমঝোতা করলে তা তাদের বিষয়; কিন্তু মুসলিম উম্মতের জন্য কম্প্রোমাইজ বা সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কি একথা বলতে পারি যে, কুরআনের এই বিধানগুলো আমরা পশ্চিমাদের খাতিরে বাদ দিয়ে দিব? এটা কি সম্ভব? কখনো নয়। কাজেই ঠান্ডা মাথায় আমাদেরকে ভাবতে হবে, তাওহীদের এই যমীনে ইসলামী শরীয়ত বিরোধী এই ধরনের কোনো নীতিমালা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়! এটা দেশের জন্য হুমকি। আমরা দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আমাদের রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের হাতকে শক্তিশালী করুন দেশ ও জাতির কল্যাণে! সমস্ত অকল্যাণ থেকে তাদেরকে হেফাজত করুন! এই ধরনের বিষয়গুলো উপস্থাপন করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নের চিন্তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে দূরে রাখুন! আর এটা অনুভব করার তাওফীক দান করুন যে, এটা বাস্তবায়ন করার চিন্তা করতে গেলেই আত্মঘাতী হবে! এই কমিশনের আসল কাজ কিন্তু বাকিই রয়ে গেল আরেকটি কথা, এই কমিশনের আসল যে কাজ ছিল, তা কিন্তু বাকিই রয়ে গেল। তারা যা করেছেন তা হল, আগাগোড়া অনধিকার চর্চা, আল্লাহদ্রোহিতা এবং আল্লাহর দেওয়া কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তদ্রোহিতা। যেটা দরকার ছিল তা হল, নারী বিষয়ে ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নের অভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা যে অধিকার বঞ্চিত হয়, সেটার জন্য বাস্তবমুখী একটি প্রস্তাবনা পেশ করা, যাতে নারীরা আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধান মেনে আল্লাহর নেক বান্দি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধান অনুযায়ী নিজেদের সমস্ত অধিকার লাভ করতে পারে। এ কমিশনের সংস্কার করার মতো আরেকটি কাজ ছিল– ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে শরীয়তের স্পষ্ট বিরোধী অনেকগুলো ধারা রয়েছে। উলামায়ে কেরামের সহায়তা নিয়ে এই ধারাগুলোকে শরীয়তসম্মত করে দেওয়া। তা তো করেইনি, উল্টো আরও কুফরী মতবাদ এবং জাহেলী রীতি-নীতি অবলম্বনের প্রস্তাব করেছে। সরকার যদি আসলেই দেশ ও জনগণের কল্যাণ চায়, তাহলে এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী শরীয়ত ও নবীজীর সীরাত থেকে নারী বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করা কর্তব্য। ব্যস, ভাই! বলার আরও অনেক কিছুই আছে। এতটুকুতে আমি শেষ করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: اِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ اِذَا عَمِلَ اَحَدُكُمْ عَمَلاً اَن يُّتْقِنَهٗ "নিশ্চয়ই, আল্লাহ পছন্দ করেন যে আপনি যা করছেন তা দক্ষতার সাথে সম্পাদন করুন।"[1] আল্লাহর সমর্থন ব্যক্তির সাথে তার কর্মের সাথে সাথে থাকে। যে ব্যক্তি দক্ষতা ও মার্জিততার সাথে এটি সম্পন্ন করে তার জন্য কর্মের পুরষ্কার দ্বিগুণ হয়। যখন কোন ব্যক্তি এ ব্যাপারে উন্নতি করে, তখন সে আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে যায়। আল্লাহ যাকে দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন তাকে অর্থ লাভের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং আল্লাহর সৃষ্টিকে উপকৃত করার জন্য তাদের দক্ষতা ব্যবহার করা উচিত, যা আল্লাহর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি রূপ। আমাদের বিশ্বাস আমাদেরকে সমাজের দায়িত্বশীল সদস্য হতে উৎসাহিত করে যারা অনিচ্ছা ছাড়াই তাদের কাজ করে। এটি আমাদেরকে আমাদের লেনদেন, কর্ম এবং ধর্মীয় ও নাগরিক কর্তব্যগুলিকে নিখুঁত করার আহ্বান জানায়। এই দায়িত্ববোধ একটি কারণ যে ইসলামিক ইতিহাসকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। দায়িত্ববোধের জন্য প্রয়োজন যে কাজটি একজনের সর্বোত্তম ক্ষমতা এবং দক্ষতা অনুযায়ী সময়মতো সম্পন্ন করা হয়। যদি এটি না হয়, তাহলে ফলাফল অপর্যাপ্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষকরা, যাদের কার্যকরভাবে শেখানোর যোগ্যতা এবং দক্ষতার অভাব রয়েছে তাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট করার ঝুঁকি রয়েছে। অযোগ্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে। এবং সর্বোপরি, ইসলামী প্রকল্পগুলিতে একজন অদক্ষ এবং অদক্ষ অবদানকারী মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে এবং তাদের বিশ্বাসকে বিপন্ন করতে পারে। জীবনে আপনার দক্ষতার প্রয়োগ এবং নেতিবাচক ফলাফল প্রতিরোধ করার গুরুত্ব নবী صَلَّى الـلّٰـهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم দ্বারা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। যে ব্যক্তি এই দক্ষতাগুলি প্রয়োগ করেছিল তাকে আল্লাহর প্রিয় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। দক্ষতার সাথে কাজ সম্পাদন করার জন্য, কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। 1. ক্রমাগত পেশাদার উন্নয়ন (CPD) আজকের বিশ্বে, প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং প্রতিটি সেক্টরকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানিয়ে নিতে হবে। নিজেকে ক্রমাগত উন্নত না করে, আপনি পিছিয়ে পড়বেন এবং বেকার হয়ে যাবেন। অতএব, আপনি যদি সফল হতে চান তবে নিয়মিত পেশাদার বিকাশ করুন। 2. স্ব-মূল্যায়ন একজন ব্যক্তি পরিশ্রম করে আঙ্গুরের একটি ছবি তৈরি করেছেন। ছবিটি এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে পাখিরা সেগুলিকে বাস্তব বলে মনে করেছিল এবং সেগুলি খাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এ কারণে ছবিটি মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। লোকে শিল্পীর প্রশংসা করলেও তাকে সন্তুষ্ট দেখাচ্ছিল না। কেউ একজন শিল্পীকে জিজ্ঞাসা করেছিল কেন এবং তিনি উত্তর দিলেন: আঙ্গুরের প্রতিচ্ছবিটি বাস্তব মনে হচ্ছে এবং সেই কারণেই পাখিরা এর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আঙ্গুরের কাছাকাছি স্ক্যারেক্রোর ছবিটি বাস্তব দেখায় না। তা হলে পাখিরা ভয়ে উড়ে যেত। আমি স্বীকার করি এটি একটি ত্রুটি, এবং আমি এই ছবিতে আরও কঠোর পরিশ্রম করব। শিল্পী এই অভাব পূরণ করে পরের দিন তার লক্ষ্য পূরণ করেন। বিভ্রম এবং অসারতা দক্ষতার পথে প্রধান বাধা, কারণ তারা আমাদের ত্রুটি এবং ত্রুটিগুলির প্রতি আমাদের অন্ধ করে দেয়। আমরা কথায় মহান প্রমাণিত হই কিন্তু যখন কর্মের সময় আসে তখন ব্যর্থ হই। আপনার অর্জনগুলিকে সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করা এবং আরও উন্নতি করার উপায় খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এই সম্ভাবনাগুলি আপনার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের আপনার যাত্রায় সহায়ক হবে। 3. একটি দৈনিক পরিকল্পনাকারী ডিজাইন করুন পরিকল্পনা আপনার লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি। একটি দৈনিক পরিকল্পনাকারীর সাথে, আপনি কার্যকরভাবে আপনার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলিকে সংগঠিত করতে পারেন। একটি ভালো নিয়তের আশীর্বাদের কারণে, আপনার লক্ষ্যগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং আল্লাহর রহমত নিশ্চিত করে যে আপনার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দৈনিক পরিকল্পনাকারী ব্যবহার করা সহজ হবে যদি এটি সহজ হয় এবং আপনার সমস্ত কাজ একসাথে সংযুক্ত করে। এটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ফোকাস বজায় রাখতেও সহায়তা করে। 4. স্ক্রীন টাইম কমিয়ে দিন ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি অনুৎপাদনশীলতা, অদক্ষতা এবং অসাবধানতার একটি প্রধান কারণ। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট, স্ট্যাটাস, টুইট এবং মেসেজ চেক করা আপনার কাজের জন্য বিষাক্ত। এমনকি লোকেরা অপারেশন থিয়েটারে, গাড়ি চালানোর সময়, রান্নাঘরে কাজ করার সময় এবং অফিসে মিটিং করার সময় তাদের ফোন চেক করার জন্য পরিচিত। এতে জীবন বা জীবিকা নষ্ট হতে পারে। আপনার ফোনে অত্যধিক সময় ব্যয় করা আপনাকে আপনার দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা দেয়। আপনি যদি দক্ষতার সাথে আপনার কাজ সম্পূর্ণ করতে চান তাহলে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন। আপনি যদি এই বাধা অতিক্রম করেন তবে আপনার স্বপ্নগুলি বাস্তবে পরিণত হবে এবং আপনি সাফল্য অর্জন করতে থাকবেন। 5. সময় বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হোন দৈনিক পরিকল্পনাকারীর মাধ্যমে, আমরা সিদ্ধান্ত নিই কোন কাজটি করতে হবে এবং একটি সময়সূচীর মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নিই কখন এটি করতে হবে এবং কতটা সময় দিতে হবে। অতএব, আমাদের অবশ্যই সৎ এবং নির্ভুল হতে হবে। প্রতিটি কার্যকলাপের জন্য একটি উপযুক্ত সময় বরাদ্দ করা আবশ্যক। এটি আমাদের দক্ষতা প্রকাশ করতে এবং সাফল্য অর্জন করতে সহায়তা করবে। আল্লাহ আমাদেরকে দক্ষতা ও দক্ষতার বরকত দান করুন এবং সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। اٰمِیْن بِجَاہِ النَّبِیِّ الْاَمِیْن صَلَّی اللہ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلہٖ وَسَلَّم
বাংলাদেশে চলতি বছরের (১৪৪৬ হিজরি/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ) ফিতরার হার নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় এ হার নির্ধারণ করা হয়। নতুন ফিতরার হার ঘোষণা সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরার হার ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর (২০২৪) সর্বনিম্ন ফিতরা ছিল ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা। জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের নতুন ফিতরার হার ঘোষণা করেন। ফিতরার হার নির্ধারণের ভিত্তি ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী, ফিতরা নির্ধারণ করা হয় গম, আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের নির্দিষ্ট পরিমাণের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। একজন মুসলমান সামর্থ্য অনুযায়ী এসব পণ্যের যে কোনো একটি বা তার সমপরিমাণ বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে প্রদান করতে পারবেন। এই বছর ফিতরার হার নির্ধারণে যে পরিমাণ খাদ্যশস্যের মূল্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা হলো: গম বা আটা: ১.৬৩ কেজি যব: ৩.২৫ কেজি খেজুর: ৩.২৫ কেজি কিশমিশ: ৩.২৫ কেজি পনির: ৩.২৫ কেজি ফিতরা আদায়ের গুরুত্ব সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। এটি ঈদের দিন গরিব ও দুস্থদের জন্য সাহায্য হিসেবে দেওয়া হয়, যাতে তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। ইসলামি পণ্ডিতরা পরামর্শ দেন, ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করা উত্তম। যাদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব, তারা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি বিতরণ করেন এবং গরিবদের সহযোগিতা করেন। প্রতিবছরের মতো এবারও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত ফিতরার হার মুসলিম উম্মাহকে শরিয়াহ নির্দেশিত পন্থায় এই ইবাদত সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে। সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা প্রদান করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ইসলামের শিক্ষা।
আল্লাহ তাআলা মানব জাতির জন্য কিছু দিন ও রাতকে বিশেষ বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তেমনই একটি বিশেষ সময় হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। এই দিনগুলোতে নেক আমলের ফজিলত এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। 🔹 হাদীসে জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফজিলত রাসুল (সা.) বলেন: “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় দিন হলো জিলহজ্জের প্রথম দশ দিন। এ দিনগুলোর যে কোনো এক দিনে করা নেক আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।” (বুখারি: ৯৬৯) 🔸 এই দশ দিনে যে আমলগুলো করা উচিৎ নিচে এই দশ দিনের সর্বোত্তম আমলগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো: ইসলাম ও ধর্ম রিলেটেড নিউজ ১. তওবা ও আত্মশুদ্ধি এই বরকতময় সময়ের শুরুতেই আমাদের উচিত নিজ গুনাহর জন্য খাঁটি অন্তরে তওবা করা এবং আল্লাহর দরবারে ফিরে আসা। কারণ এই দিনগুলোতে আল্লাহর রহমত বহুগুণে নাজিল হয়। ২. নফল রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ - আরাফার দিন) জিলহজ্জের প্রথম নয় দিনে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ (আরাফার দিন) রোজা রাখলে: “এক বছরের আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়।” (সহীহ মুসলিম: ১১৬২) ৩. তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনে এবং ঈদের দিনগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জিকির করা: 📌 যে জিকিরগুলো বেশি করা উচিত: তাকবির: الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله، والله أكبر الله أكبر ولله الحمد তাহলিল: لا إله إلا الله তাহমিদ: الحمد لله 📅 সময়সীমা: ৯ জিলহজ্জ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা ওয়াজিব (তাকবিরে তাশরিক)। ৪. নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও অধিক ইবাদত এই সময়ে বেশি করে নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত) পড়া কুরআন তিলাওয়াত দরূদ পাঠ সারা দিন জিকির ও আল্লাহর প্রশংসা করা ৫. সদকা ও দান খয়রাত অসহায়, দরিদ্র, এতিম, মিসকিনদের মাঝে সাহায্য বিতরণ করা এই আমলের ফজিলত বরকতময় দিনে বহুগুণ বৃদ্ধি পায় ৬. কোরবানির নিয়ত থাকলে চুল ও নখ না কাটা রাসুল (সা.) বলেন: “তোমাদের কেউ যদি কোরবানির ইচ্ছা করে, তবে সে যেন জিলহজ্জের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে কোরবানি না করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।” (সহীহ মুসলিম: ১৯৭৭) 📌 এটি কোরবানিদাতার জন্য মুস্তাহাব (হানাফি মতে) এবং অন্য মাযহাবে কিছুটা ভিন্ন। ৭. আরাফার দিনের দোয়া ও ইবাদতে ব্যস্ত থাকা (৯ জিলহজ্জ) আরাফার দিনকে রাসুল (সা.) বছরের শ্রেষ্ঠ দিন বলেছেন এই দিন দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় 📌 সর্বোত্তম দোয়া: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (তিরমিযী: ৩৫৮৫) ৮. কোরবানি করা (১০ জিলহজ্জ) ঈদুল আযহার দিন পশু কোরবানি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের জন্য এটি ওয়াজিব (হানাফি মতে) 📌 হাদীস: “কোরবানির দিনে আল্লাহর কাছে কোরবানির চেয়ে প্রিয় কোনো আমল নেই।” (তিরমিযী) ✅ সংক্ষিপ্ত চেকলিস্ট: জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল দিন করণীয় ফজিলত ১-৮ জিলহজ্জ রোজা, জিকির, তওবা, কুরআন তিলাওয়াত বহু সওয়াব ৯ জিলহজ্জ আরাফার রোজা, দোয়া, তাকবির ২ বছরের গুনাহ মাফ ১০ জিলহজ্জ ঈদের নামাজ, কোরবানি, দান আল্লাহর প্রিয় আমল 🔚 উপসংহার: এই দশ দিন হলো এমন একটি সময় যা আমাদের ঈমান ও আমলকে পরিশুদ্ধ করে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। আসুন, এই বরকতময় সময়কে আমরা হেলাফেলা না করে পূর্ণভাবে কাজে লাগাই।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে কফিন মিছিল করেছেন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইল শহরের শান্তিকুঞ্জ মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলটিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কাফনের কাপড় পরে কফিন বহন করে অংশ নেন। প্রতিবাদের এক ভিন্নমাত্রা তৈরি হওয়ায় মিছিলটি শহরজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন—“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঠিক এই সময়ে একটি সিন্ডিকেট সদরের জনমানুষের মতামত উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে।”তারা বলেন,“সদরের জন্ম- এমন কাউকে বাদ দিয়ে বহিরাগত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে তৃণমূলের বহু ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকর্মী চরমভাবে হতাশ হয়েছে। এই মনোনয়ন বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে বিভাজন তৈরি করবে।” বক্তারা দ্রুত মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তৃণমূলের সমর্থন তাঁর দিকেই বেশি।” বক্তাদের মতে,পক্ষপাতদুষ্টভাবে মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা চলছে,স্থানীয় নেতাদের ত্যাগ-সংগ্রাম মূল্যায়ন করা হয়নি,তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আসনে একটি সিদ্ধান্ত পুরো সংগঠনকে বিপদে ফেলতে পারে। মিছিল ও সমাবেশে বক্তাদের অভিযোগ—“যে সিদ্ধান্তে কর্মীদের রক্তক্ষরণ বাড়ে তা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না।” সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন—রফিকুল ইসলাম স্বপন সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি,হাদিউজ্জামান সোহেল সিনিয়র সহ-সভাপতি, সদর উপজেলা বিএনপি,মামুন সরকার সহ-সভাপতি সদর উপজেলা বিএনপি এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। মিছিলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল–সমর্থিত নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয়দের মতে, এটি সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গাইল সদর বিএনপির সবচেয়ে বড় প্রতিবাদমূলক শোভাযাত্রা। কফিন মিছিলকে কেন্দ্র করে বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—কেন্দ্র ঘোষিত মনোনয়নকে তৃণমূলের ব্যাপক প্রত্যাখ্যান,দলীয় ঐক্যে সংকটের সম্ভাবনা,নির্বাচনী প্রচারণায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে,বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ জরুরি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলার আটটি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। দলটি সারাদেশের ঘোষিত ১২৫টি আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার চারটি আসনে চারজনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী— টাঙ্গাইল-১ (ধনবাড়ী ও মধুপুর) মনোনয়ন পেয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা এনসিপির সদস্য ও ধনবাড়ী উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী সাইদুল ইসলাম আপন। তিনি জুলাই আন্দোলনের শহীদ সাজিদের ভাই। টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ডেপুটি মুখ্য-সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ও সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) সাইফুল্লাহ হায়দার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। টাঙ্গাইল-৫ (সদর) টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্যসচিব মাসুদুর রহমান রাসেলকে মনোনীত করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) টাঙ্গাইল জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক খন্দকার মাসুদ পারভেজ মনোনয়ন পেয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা কমিটির সদস্যসচিব ও সদরে মনোনীত প্রার্থী মাসুদুর রহমান রাসেল বলেন, “যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।” দলীয় সূত্র জানায়, বাকি আসনগুলোতেও প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই পর্যায়ক্রমে ঘোষণা দেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্যোগে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের পৌর উদ্যান থেকে এই মৌন মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও পৌর উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শহর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান আলীমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান জিন্নাহ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম ঝলক, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হকসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কয়েকটি আসনে যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। টাঙ্গাইল-৫ আসনেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভ্রান্ত করে এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার জন্ম অন্য উপজেলায়—যা স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলেন, “যে আসনে স্থানীয় মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, সেখানে বাইরের কাউকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা তৈরি হয়েছে।" সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে ঘোষিত মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে স্থানীয় নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা ফরহাদ ইকবালকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানান। তারা বলেন, ফরহাদ ইকবাল স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়, যোগ্য এবং দীর্ঘদিন ধরে দলের কঠিন সময়ে রাজপথে ছিলেন। মিছিলে সদর উপজেলা ও শহর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। পুরো কর্মসূচি জুড়ে দলীয় নেতারা মুখে কালো ব্যাজ ধারণ করে নীরব প্রতিবাদ জানান। স্থানীয় রাজনীতিতে এই মৌন মিছিলকে বড় ধরনের বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের শঙ্কা তৈরি করা হচ্ছে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, “এসব শঙ্কা দূর করে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই পরিবেশ কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না।” শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইল শহরে শ্রমিক, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ ও নিপীড়িত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত ‘মাথাল মার্কার মিছিল’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কার এখন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে যুক্ত। সংস্কার করতে হলে ‘ভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের’ নির্বাচন প্রয়োজন। এ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া ছাড়া গণতন্ত্রের সঠিক অগ্রযাত্রার বিকল্প নেই। এই নির্বাচন যাতে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা ষড়যন্ত্রের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।” নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট রাজনীতির ধারকরা বিভিন্নভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। কিছু গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে চাইছে। এসব অপচেষ্টা রুখে দিতে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।” এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনসহ সার্বিক পরিস্থিতি দেখভালের জন্য একটি ‘পরিবেশ কমিটি’ গঠনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। মিছিলে সদর আসনের প্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের সংগঠক ফাতেমা রহমান বীথি, সংগঠক তুষার আহমেদ, সদর উপজেলার সদস্য সচিব ফারজানা জেসমিনসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা জীবিকার ন্যায্য হিস্যা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, এবং সংসদীয় সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার প্রদর্শন করেন।
২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে টাটার এই স্টক, আশা দেখেছে মতিলাল ওসওয়াল ব্রোকারেজ ফার্ম
নতুন বছরের প্রাক্কালে : সুরক্ষিত এক ভবিষ্যতের জন্য পারিবারিক দৃঢ় সংকল্প
এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়ল সোনার দাম, আজ কিনলে কততে পাবেন ?
ভারতকে বিপাকে ফেলতে গিয়ে সমস্যায় ট্রাম্প, মার্কিন মুলুকে ব্যবসায় ক্ষতি, দেশেই বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট
আধারের ফটোকপি দিলে কাজ হবে না ! UIDAI করতে চলেছে বড় পরিবর্তন, নতুন প্রযুক্তি করবে কার্ড যাচাই
১৩১২ টাকার স্টক একদিনেই পড়েছে ২৬১ টাকা, বিক্রি না হোল্ড করবেন ?
নতুন কিয়া সেলটস না হুন্ডাই ক্রেটা নেবেন ? ডিজাইন ও পারফরম্যান্সে কোন গাড়ি এগিয়ে ?
দুর্দান্ত ডিজাইন, নজরকাড়া চেহারা নিয়ে এল কিয়া সেলটস, টাটা সিয়েরা, হুন্ডাই ক্রেটার সঙ্গে হবে প্রতিযোগিতা