ঢাকা, বৃহস্পতিবার, জুন ৫, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩ মে, ২০২৫, ১১:১৮ পিএম

চীনের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে
HTML tutorial

ইসলামাবাদ, পাকিস্তান – ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান এবার দুই প্রতিবেশী চীন ও আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে ২১ মে ২০২৫ তারিখে বেইজিংয়ে একটি ‘অনানুষ্ঠানিক’ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেয় চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই ফোরামের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০২৩ সালের মে মাসে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানান, এই বৈঠকের মূল ফলাফল ছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা প্রকাশ। তারা নীতিগতভাবে আবারও রাষ্ট্রদূত বিনিময়ে সম্মত হয়েছে এবং চীন এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

ওয়াং ই আরও বলেন, চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC) প্রকল্প, যা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় ৬২ বিলিয়ন ডলারের একটি মেগা প্রকল্প, তা এখন আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।

একজন পাকিস্তানি কূটনীতিক জানান, বেইজিং বৈঠকের ইতিবাচক অগ্রগতির পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আস্থা গড়ার সুযোগ ছিল তিন দেশের মধ্যে।”

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মাঝেই ত্রিপক্ষীয় কূটনীতি

৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে চলমান সংঘাতে উভয় দেশই ‘জয়’ দাবি করে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে। এর মধ্যে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরের পাহেলগামে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়া হামলার প্রতিশোধে পাকিস্তানে “সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে” হামলা চালায় বলে জানায়। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই সময় চীন উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানালেও পাকিস্তানের পাশে থাকার বার্তা স্পষ্ট ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই সময়ে চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে।

আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন সূচনা

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরে এলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এটি পাকিস্তানের জন্য ইতিবাচক হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পাকিস্তান অভিযোগ করে, তালেবান সরকার তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP)-কে সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালাতে দিচ্ছে। যদিও তালেবান এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

২০২৪ সালে পাকিস্তানে মোট ৫২১টি হামলার ঘটনা ঘটে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি। এতে প্রায় ১,০০০ বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়।

তবে ১৯ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার কাবুল সফর করেন, যা একটি সম্ভাব্য কূটনৈতিক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।

চীনের নিরাপত্তা উদ্বেগ ও মধ্যস্থতা

পাকিস্তান ও চীনের উভয়ের জন্যই আফগানিস্তানের নিরাপত্তা একটি মূল ইস্যু। পাকিস্তানে CPEC প্রকল্পে নিযুক্ত চীনা নাগরিকদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি চীন অভিযোগ করে, পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ETIM) আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে হামলা চালায়।

চীন-পাকিস্তান ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা হায়দার সাইয়েদ বলেন, “এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে নির্মূল করাই তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতার পূর্বশর্ত।”

ভারতের সঙ্গে তালেবান সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে ফোনালাপ হয়, যেখানে পাহেলগাম হামলার নিন্দা জানান মুত্তাকি। এছাড়া মে মাসের শুরুতে তালেবানের উপ-মন্ত্রীর ভারত সফরের খবরও ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্পর্ক উন্নয়ন পাকিস্তান ও চীনের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তবে সাইয়েদ মনে করেন, “পাকিস্তান কাবুলকে অবিশ্বাস করে না, তবে তাদের চায় কার্যকর পদক্ষেপ। ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে আফগানিস্তান স্বাধীন, তবে সেটা যেন পাকিস্তান ও চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে না যায়।”

কাবুলের বিশ্লেষক তামীম বাহিস বলেন, “আফগানিস্তানকে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও তা যেন অন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর জন্য হুমকি হিসেবে না দেখা হয়।”

সোর্সঃ আল-জাজিরা HTML tutorial

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন

বিশ্ব/আন্তর্জাতিক রিলেটেড নিউজ

HTML tutorial