কাশ্মীরের পাহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই উত্তেজনার মূলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ — বিশেষ করে সেই পরিবারগুলো যাদের একজন সদস্য ভারতীয়, আরেকজন পাকিস্তানি।
সম্প্রতি ভারতের আদেশ অনুযায়ী, পাকিস্তানি নাগরিকদের মঙ্গলবারের (২৯ এপ্রিল) মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। ফলে হাজারো পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যেখানে মা-পাকিস্তানি, আর সন্তান বা স্বামী ভারতীয়।
নয়াদিল্লির ফরহান এবং করাচির সাইরা — প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিলেন তিন বছর আগে। আজ তাদের ৯ মাস বয়সী সন্তান আজলানকে নিয়ে সাইরাকে পাকিস্তানে ফিরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন দেখা যায় আজলানের পাসপোর্ট নীল – অর্থাৎ ভারতীয়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বলেন, “শিশুটি যেতে পারবে না।”
সাইরার কোলে সন্তান, চোখে অশ্রু — অথচ তাকে একাই সীমান্ত পেরোতে বলা হয়। শেষে কান্নায় ভেঙে পড়ে অচেতন হন তিনি।
৪৮ বছর বয়সী হালিমা বেগম, যিনি ২৫ বছর আগে ওডিশায় বিয়ে করে ভারতেই জীবন গড়েছিলেন। এখন তার স্বামী নেই, দুই সন্তান ভারতীয় পাসপোর্টধারী — কিন্তু তিনিই পাকিস্তানি নাগরিক হওয়ায় তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।
সন্তানরা সীমান্তে কাঁদে, অনুরোধ করে — “আমার মা একা যাবে কোথায়?”
হালিমা বলেন, “আমার তো পাকিস্তানে এখন আর কোনো ঘর নেই। মা-বাবা নেই, ভাইয়ের ঘরেও জায়গা নেই।”
আজলানের দুধের বোতল নিয়ে খেলার ছলে তাকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করছিলেন তার বাবা ফরহান। কিন্তু আজলান জানে, তার মায়ের ছোঁয়া কেমন।
সাইরা যখন অচেতন হয়ে যান সীমান্তে, তখন ভারতের রক্ষীরা শেষবারের মতো তার স্বামী ও সন্তানকে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন।
ফরহান বলেন, “যখন বিয়ে করে সাইরা দিল্লিতে এল, তখন আমার জীবন বদলে গিয়েছিল। এখন আবার বদলে গেল — এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে।”
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এমন বহু পরিবার এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে। লেখিকা সুচিত্রা বিজয়নের ভাষায়, “বিচ্ছেদের এই গল্পগুলো এখন উপমহাদেশের বাস্তবতা।”
পৃথিবীর দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের দ্বন্দ্বের মাঝখানে আটকে পড়েছে ছোট্ট শিশু, বয়স্ক রোগী, এবং ভালোবাসায় বাঁধা পরিবার।
সাইরার শাশুড়ি আয়েশা বেগম বলেন,
“পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় প্রেম করো, কিন্তু পাকিস্তানে কখনো করো না।”
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন