ভারতীয় মুসলিম নারী সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে বিজেপি মন্ত্রীর অশ্লীল মন্তব্যে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া
-(5).png)
ভারতের সেনাবাহিনীতে কর্মরত এক মুসলিম নারী কর্মকর্তা, কর্নেল সোফিয়া কুরশিকে ঘিরে সাম্প্রতিক এক বিতর্কে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক মাধ্যম। মধ্যপ্রদেশের উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী এবং বিজেপির সিনিয়র নেতা বিজয় শাহ এক জনসভায় সোফিয়াকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ও ঘৃণামূলক মন্তব্য করে বলেন, “আমাদের হিন্দু ভাইদের যারা পেহেলগামে বিবস্ত্র করে হত্যা করেছিল, মোদিজি তাদের ঘরে ঢুকে জবাব দিয়েছেন। সেই জবাব দিতে পাঠানো হয়েছিল তাদেরই এক বোনকে—এই মুসলিম সেনা কর্মকর্তাকে।” তিনি আরও বলেন, “ওরা আমাদের বোনদের সিঁদুর মুছে দিয়েছিল, মোদিজি তাদের ঘরে ঢুকে শিক্ষা দিয়েছেন।”
এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেক কট্টর হিন্দুত্ববাদী সমর্থক বিজয় শাহের মন্তব্যকে সমর্থন করলেও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন, সাংবাদিক এবং সচেতন নাগরিকদের এক বিশাল অংশ তীব্র প্রতিবাদ জানান। কংগ্রেসের মধ্যপ্রদেশ সভাপতি জিতু পাতুয়ারি এই বক্তব্যের ভিডিও এক্স-এ (টুইটারে) শেয়ার করে প্রশ্ন করেন, “বিজেপি কি এই মানসিকতাকেই সমর্থন করে?” সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকারজুন খোরগেও একে লজ্জাজনক ও অশালীন মন্তব্য বলে আখ্যা দেন।
সাংবাদিক শুভঙ্কর মিশ্র তার ইউটিউব চ্যানেলে বক্তব্য দিয়ে বলেন, “লজ্জা লজ্জা লজ্জা! মোদিজির লজ্জা হওয়া উচিত। আপনার দলের নেতার এই বক্তব্য এখন পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে। বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি ধ্বংস হচ্ছে।” অপর এক সাংবাদিক সংকেত উপাধ্যায় বলেন, “দেশে যখন ঐক্যের প্রয়োজন, তখনই মানুষের মনে বিষ ঢেলে দিচ্ছে বিজেপি নেতারা। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা সম্পর্কে এমন মন্তব্য শুধু অপমানজনক নয়, চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনও।”
বিশ্ব/আন্তর্জাতিক রিলেটেড নিউজ
সোফিয়া কুরশি বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল এবং সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্দুর’ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারিভাবে ব্রিফিংও দিয়েছেন। এমন একজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্য শুধু ব্যক্তি অপমান নয়, বরং পুরো ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে হেয় করার অপচেষ্টা বলেই অনেকে মনে করছেন। অপারেশন সিন্দুরে একতাবদ্ধভাবে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু এখন সেই অপারেশনের মুখ হিসেবে সোফিয়াকে টার্গেট করে বিজেপি নেতার বক্তব্য একটি গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয় বলেও বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।
বিজয় শাহ এখনো পর্যন্ত তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। বরং সংবাদমাধ্যমের উপর দোষ চাপিয়ে বলেছেন, “মিডিয়া আমার বক্তব্য ঠিকভাবে উপস্থাপন করেনি।” তবে অনেকেই মনে করছেন, আট বারের নির্বাচিত বিধায়ক হিসেবে এবং দীর্ঘদিনের মন্ত্রী হিসেবে তার এমন বক্তব্যকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। মোদি সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, যা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠছে।
এই ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো, ভারতের বর্তমান রাজনীতিতে মুসলিম সম্প্রদায় কতটা সংবেদনশীল অবস্থানে রয়েছে এবং কীভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। সোফিয়া কোনো সন্ত্রাসীর বোন নন, বরং তিনি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য—এমনটাই দাবি সাধারণ মানুষ ও বিশিষ্টজনদের।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন