প্রাচীন কালের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল ব্যাক্তিকেন্দ্রিক।শিক্ষাবিদরা যেখানে আগমন করতেন সেখানেই গড়ে উঠতো সুবিশাল শিক্ষাগার। তাই হযরত উমর রা.এর যুগ থেকে শুরু করে যে সকল মহামনীষী এদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আগমন করেন এবং বিভিন্ন স্থানে মসজিদ মাদরাসা নির্মাণ করেন, তারা এদেশে হাদিসের চর্চা করেনি এ কথা বলা তাদের প্রতি অবিচারেরই নামান্তর।
কেননা তারা ছিলেন তৎকালীন হাদিস চর্চার প্রাণকেন্দ্র আরব,ইরান, ইরাকও খোরাসান থেকে আগত পীর আউলিয়া। কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা প্রচারই ছিলো তাদের মূল মিশন। বর্তমানে রংপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় হিজরি তৃতীয় শতকের শেষের দিকে নির্মিত একটি বিরাট মসজিদ ও তৎসংলগ্ন ইমারাতের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
গবেষকগণ অনুমান করেছেন যে,সম্ভবত এখানে বিরাট আকারের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল,যাতে বহু ছাত্র লেখাপড়া করত। তাছাড়া উপকূলীয় অঞ্চল সমূহে আরব বণিকগণ নিজেদের বসতি গড়ে তুলে ছিলেন। সে বসতি সমূহে তারা নিজেদের প্রয়োজনে মসজিদ গড়ে তুলে ছিলেন। সে সব মসজিদগুলোতে ব্যাপকহারে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা হত।চারশত হিজরীর দিকে আগত পর্যটক ইবনে হাওকাল মসজিদ ভিত্তিক এই শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপকতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছেন যে,কোন মসজিদে গেলেই ছাত্রদের শোরগোল শোনা যেত।
এবং দলে দলে ছাত্রদের আনাগোনা পরিলক্ষিত হতো। বলা যায় যে, তখন থেকেই স্বল্প পরিসরে হলেও এদেশে হাদিস চর্চা শুরু হয়। তবে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তুঘলকীয় শাসনামলে বিশিষ্ট হাদীসবেত্তা শায়েখ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামাহ দিল্লী থেকে ঢাকার সোনারগাঁওয়ে আগমন করেন। তাকে কেন্দ্র করেই সেখানে জ্ঞানপিপাসু বহু শিক্ষার্থীর সমাগম শুরু হয়।
ফলে সোনারগাঁওয়ে ইসলামী শিক্ষা ও হাদিস চর্চার অন্যতম কেন্দ্র তাফসীর ইত্যাকার ইলম ও মা'রিফাতের আলো বিতরনে নিয়োজিত ছিলেন। সোনারগাঁওয়ের এই হাদীস চর্চার কেন্দ্র বহু কীর্তিমান বিদগ্ধ হাদীস বিশারদের জন্ম দিয়েছে। তন্মধ্যে শায়েখ ইয়াহইয়া মুনিরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনিএখানে বসে বুখারী, মুসলিম, জামেউস সগীর, মুসনাদে আবু ইয়ালা, মাশারিকুল আনওয়ার সহ বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থ অধ্যায়ন করেছিলেন।