পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক অভিযানের আশঙ্কায় এক হাজারের বেশি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং স্থানীয়রা ইতোমধ্যে মাটির নিচে দেয়ালঘেরা বাংকার প্রস্তুত করছে।
ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গত ২২ এপ্রিল ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহেলগামে একটি সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই হামলার পর সেনাবাহিনীকে "সম্পূর্ণ অভিযানিক স্বাধীনতা" দিয়েছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, তাদের কাছে "বিশ্বস্ত তথ্য" রয়েছে যে, ভারত শিগগিরই সামরিক অভিযান চালাতে পারে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক টেলিভিশন বার্তায় জানিয়েছেন, “পরবর্তী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা হতে পারে।”
হাফিজ নাজির আহমেদ, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ধর্মীয় বিষয়ক বিভাগের প্রধান জানান, “কাশ্মীরে সব মাদ্রাসায় ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।” বিভাগটির এক কর্মকর্তা বলেন, “সীমান্ত উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত।”
প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। অনেকেই মাটির নিচে কাদা এবং কংক্রিটের বাংকার বানিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন।
চাকোথির বাসিন্দা ৪৪ বছর বয়সী ইফতিখার আহমদ মীর বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা দারুণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি, বিশেষ করে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে। আমরা চেষ্টা করি যেন তারা স্কুল শেষে সরাসরি বাড়ি ফিরে আসে।”
মুজাফফরাবাদের স্কুলগুলোতে জরুরি পরিষেবা কর্মীরা শিক্ষার্থীদের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ১১ বছর বয়সী আলি রাজা বলেন, “আমরা শিখেছি কীভাবে আহতকে ব্যান্ডেজ দিতে হয়, স্ট্রেচারে নিতে হয়, এবং আগুন নেভাতে হয়।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো ‘ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি’ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সীমান্তে গুলিবিনিময় অব্যাহত রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে ভারত পাকিস্তানি বিমানকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, এবং পাকিস্তানও একই পদক্ষেপ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও উভয় দেশকে উত্তেজনা হ্রাসে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই হামলার তদন্তে পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়। এর ১২ দিন পর ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। অতীতে ভারত গোপন অভিযান, সার্জিকাল স্ট্রাইক, বিমান হামলা ও সীমান্ত দখলের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।
সুত্রঃ আল-জাজিরা
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন