সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (৮২) ‘আগ্রাসী ধরনের’ প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, যা ইতিমধ্যেই তাঁর হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার তাঁর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে প্রস্রাবের সমস্যার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন বাইডেন। পরে শুক্রবার তাঁর প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই ক্যান্সার ‘Gleason Score’ অনুযায়ী ৯-এর মধ্যে ৯, যা ক্যান্সারের সবচেয়ে বিপজ্জনক ধাপগুলোর একটি। এই অবস্থাকে "উচ্চ মাত্রার" (high-grade) ক্যান্সার হিসেবে ধরা হয়, যার মানে এটি দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে বাইডেনের অফিস জানিয়েছে, এটি ‘হরমোন-সংবেদনশীল’ (hormone-sensitive) ক্যান্সার, যার ফলে এটি চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

বিশ্ব/আন্তর্জাতিক রিলেটেড নিউজ

ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা শুরু করেছে পাকিস্তান, ধ্বংস একাধিক এয়ারবেস ও অস্ত্রাগার

কাশ্মীর হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি পাকিস্তানের, সন্দেহভাজনদের বাড়িতে অভিযান ও ভাঙচুর

পাকিস্তানের পেশোয়ারের মসজিদে বিস্ফোরণে অন্তত ৪৭ জন নিহত

ইসরাইল থেকে পালাতে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ইহুদিবাদীদের ভিড়

বিবৃতিতে বলা হয়:
“গত সপ্তাহে প্রস্রাবের সমস্যা বাড়ায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে একটি প্রোস্টেট নডিউল শনাক্ত হয়। শুক্রবার তাঁর প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে, যার Gleason স্কোর ৯ (Grade Group 5) এবং এটি হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এটি একটি আক্রমণাত্মক ক্যান্সার, তবে হরমোন-সংবেদনশীল হওয়ায় চিকিৎসার মাধ্যমে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বাইডেনের রোগ নির্ণয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মার্কিন রাজনীতির উভয় পক্ষ থেকে সমবেদনা ও শুভকামনা জানানো হয়েছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর Truth Social প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “জো বাইডেনের চিকিৎসাগত খবর শুনে আমরা দুঃখিত। জো ও জিল বাইডেন এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিক শুভকামনা রইল। আমরা জো’র দ্রুত ও সফল সুস্থতা কামনা করি।”

সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লেখেন, “জো একজন যোদ্ধা – আমি জানি তিনি এই চ্যালেঞ্জকে আগের মতোই সাহস, ধৈর্য ও আশাবাদের সাথে মোকাবিলা করবেন।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, “ক্যান্সারের চিকিৎসায় অগ্রগতি আনতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন জো। আমি জানি তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ দৃঢ়তা ও শান্ত মনোভাব নিয়ে এই অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”

যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, “জো বাইডেনের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে আমি দুঃখিত। বাইডেন ও তাঁর পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক শুভকামনা রইল। আশা করছি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

চিকিৎসা বিশ্লেষণ
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. উইলিয়াম ডাহাট বিবিসিকে বলেন, “হাড়ে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে সাধারণত এটিকে নিরাময়যোগ্য ধরা হয় না। তবে প্রাথমিক চিকিৎসায় বেশিরভাগ রোগীই ভালো সাড়া দেন এবং অনেক বছর বেঁচে থাকেন।”

তিনি আরও জানান, বাইডেনের ক্ষেত্রে হরমোনাল থেরাপি ব্যবহার করা হবে, যা ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে ধীর করে এবং উপসর্গ হ্রাস করে।

সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যক্তিগত ইতিহাস
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বাইডেন জনসম্মুখে খুব কমই এসেছেন। গত এপ্রিল মাসে তিনি একটি প্রতিবন্ধী অধিকার বিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। মে মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ২০২৪ সালের নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানো ছিল তাঁর জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত।

২০১৫ সালে তাঁর বড় ছেলে বৌ বাইডেন ব্রেন ক্যান্সারে মারা যান। এই ব্যক্তিগত ক্ষতির পর থেকেই ক্যান্সার গবেষণায় অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন বাইডেন।

২০২২ সালে তিনি ও স্ত্রী জিল বাইডেন মিলে “Cancer Moonshot” নামে একটি প্রকল্প আবার চালু করেন, যার লক্ষ্য ২০৪৭ সালের মধ্যে ৪০ লাখ ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা।