প্রথম আলোর মিথ্যা ন্যারেটিভ ফাঁস: বটগাছ কাটা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদন
মাদারীপুর, বাংলাদেশ – সম্প্রতি মাদারীপুর জেলার আলমগীরের কান্দি এলাকায় একটি বট গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, গাছটি “শিরক” আখ্যা দিয়ে কাটা হয়েছে এবং এটি শতবর্ষী একটি গাছ ছিল। তবে বাস্তবতা ভিন্ন এবং পুরো ঘটনার পেছনে রয়েছে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপট।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ৫ মে, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও, যেখানে দেখা যায় কিছু মাদ্রাসা ছাত্র একটি বট গাছ কাটছে। ভিডিওর বর্ণনায় বলা হয়, গাছটি পূজার জন্য ব্যবহার হতো এবং ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে শিরক হিসেবে গণ্য করেই গাছটি কাটা হয়েছে।
প্রকৃত ঘটনা কী?
ইসলাম ও ধর্ম রিলেটেড নিউজ
তদন্তে জানা যায়, গাছটি এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত জমিতে জন্মেছিল। পরবর্তীতে নদীভাঙনের কারণে তিনি অন্যের জমিতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে নিজের জমি ফিরে পাওয়ায় তিনি সেখানে বসবাসের জন্য জায়গা পরিষ্কার করতে গাছটি বিক্রি করেন। গাছটি কিনে নেয় স্থানীয় একটি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক, যিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাছ কাটার কাজে অংশগ্রহণ করেন।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, গাছ কাটার জন্য শ্রমিক খুঁজলেও খরচ বেশি হওয়ায় তারা নিজেরাই কাটার সিদ্ধান্ত নেন। গাছ কাটার খরচ চাওয়া হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা, অথচ গাছটির মূল্য ধরা হয় মাত্র ৬ হাজার টাকা।
প্রশাসনিক পদক্ষেপ
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছ কাটার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ১২ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জমির মালিক গাছটি মাদ্রাসার এক শিক্ষকের কাছে বিক্রি করেন এবং সেই শিক্ষক মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে গাছটি কাটতে আসেন।
গুজব বনাম বাস্তবতা
প্রথম আলোর রিপোর্টে দাবি করা হয়, গাছটি শতবর্ষী এবং ধর্মীয় অনুভূতি থেকে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে গাছটি কাটা হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত অনুযায়ী, গাছটির বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর এবং এটি কাটা হয়েছিল একেবারে ব্যক্তিগত কারণে, ধর্মীয় কোন উসিলায় নয়।
উপসংহার
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও কিছু গণমাধ্যমের একতরফা প্রতিবেদন জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিতে পারে। সাংবাদিকতার ন্যূনতম নৈতিকতা অনুসরণ করে সঠিক তথ্য যাচাই ছাড়া এমন সংবেদনশীল বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকা উচিত।
সূত্রঃ Bangla Edition
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন