আগুনের ভেতর প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে ছোট্ট এক ফিলিস্তিনি শিশু... গাজায় বিভীষিকাময় রাত!

গাজা সিটিতে একটি স্কুল-আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার পর হৃদয়বিদারক একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, একটি ছোট মেয়ে আগুনে ভস্মীভূত একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে রাতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো অবস্থান করছিল।
২৬ মে, সোমবার গভীর রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা সিটির ফাহমি আল-জারগাওই স্কুলে আগুন ধরে যায়। সেখানে আশ্রয় নেওয়া অসংখ্য পরিবার আগুনে পুড়ে যায়। ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ছোট মেয়ে আগুনের মধ্যে থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হামলায় কমপক্ষে ৩১ জনের দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
মুসলিম বিশ্ব রিলেটেড নিউজ
ভিডিওতে দেখা যাওয়া শিশুটির বেঁচে থাকার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্কুলের অন্য কিছু ফুটেজে রক্তাক্ত দেয়াল, পুড়ে যাওয়া গদি ও মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহের দৃশ্য দেখা গেছে। উদ্ধারকর্মী ও ভীত-সন্ত্রস্ত অভিভাবকরা সেখানে জীবিতদের খুঁজে ফিরছিলেন।
একজন আহত ফিলিস্তিনি নাগরিক আহমেদ সামেহ, যিনি পরিবারের সাথে ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন, বলেন, "এটি আমার ছোট মেয়ের রক্ত, যাকে আমি কাঁধে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তার বয়স মাত্র তিন বছর এবং তার মাথার খুলি ভেঙে গেছে। আমরা কিছুই না, শুধুই নিরস্ত্র, শান্তিপ্রিয় নাগরিক।"
"আমরা কিছুই না, শুধুই নিরস্ত্র, শান্তিপ্রিয় নাগরিক"
– আহমেদ সামেহ, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি
বুশরা রজব নামের আরেকজন ফিলিস্তিনি নারী বলেন, “মধ্যরাতে এক বিশাল বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙে। অনেকে নিহত হয়েছে, অনেকে আহত। তাদের মধ্যে আমার আত্মীয়রাও ছিল। আল্লাহ যেন তাদের ওপর দয়া করেন।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামলার ব্যাখ্যায় বলেছে, ফাহমি আল-জারগাওই স্কুলটি হামাস ও ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর "কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার" হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
তাদের বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, "সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি কমানোর জন্য বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল।" কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, স্কুলসহ বেসামরিক স্থাপনার ওপর হামলা নিষিদ্ধ।
"কোথাও নিরাপদ নয়"
হামলার পরপরই জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা UNRWA জানায়, "শেল্টারগুলো অভ্যন্তরীণভাবে ঠাসাঠাসি হয়ে গেছে। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মরিয়া। গাজায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে হামলা হয়নি।"
সংস্থাটি আরও জানায়, অনেক পরিবার পরিত্যক্ত, অসমাপ্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনে বাস করছে, আর অনেকেই খোলা আকাশের নিচে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
মৃত্যুর মিছিলে গাজা
এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৩,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৮,০০০-এর বেশি নারী ও শিশু রয়েছে।
এছাড়া, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১,৪০০ স্বাস্থ্যকর্মী, ২৮০ জন UN কর্মী (যা UN ইতিহাসে সর্বোচ্চ কর্মী নিহতের সংখ্যা), এবং অন্তত ১৮০ জন সাংবাদিক—যা ১৯৯২ সাল থেকে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ) যে কোনো সংঘাতে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক হত্যার ঘটনা হিসেবে রেকর্ড করেছে।
বিশ্ববিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল "ল্যানসেট"-এর মতে, জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানানো হয়, প্রকৃত মৃত্যু সংখ্যা ৪১ শতাংশ বেশি হতে পারে।
তাদের হিসাবে বলা হয়েছে, নিহতদের ৫৯.১ শতাংশই নারী, শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ। রিপোর্টে কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা দেয়া হয়নি যে নিহতদের মধ্যে কতজন যোদ্ধা ছিল।
এই সংখ্যা অনুযায়ী, গাজার যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যার ২.৯ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ৩৫ জনে একজন নিহত হয়েছেন।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন