যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে পশ্চিম তীর দখলের হুমকি ইসরায়েলের

ইসরায়েল ও তার ঐতিহাসিক ইউরোপীয় মিত্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত অবনতি ঘটছে।
গত সোমবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা এক যৌথ বিবৃতিতে গাজার উপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে নিন্দা জানায় এবং "সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ" নেওয়ার হুমকি দেয়।
পরদিন, যুক্তরাজ্য লন্ডনে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং ইসরায়েলের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা স্থগিত করে দেয়।
মুসলিম বিশ্ব রিলেটেড নিউজ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডাকে হামাসকে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
তবে ব্রিটেন ও ফ্রান্স এখনও দাবি করছে যে তারা ইসরায়েলের "দৃঢ় মিত্র"।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথে?
আগামী জুনে জাতিসংঘে আয়োজিত একটি দুই-রাষ্ট্র সমাধান বিষয়ক সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্রিটেন ও ফ্রান্স প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গুজব উঠেছে।
এটি হলে তা হবে এক রাজনৈতিক ভূমিকম্প।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এর আগে বলেছিলেন, “যখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন স্পষ্ট হবে, তখনই আমরা স্বীকৃতি দেব।” তবে এপ্রিলের শেষে তিনি স্বীকার করেন যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সৌদি আরবের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
ফরাসি গণমাধ্যম বলছে, ফ্রান্সের কর্মকর্তারা মনে করেন ব্রিটেনও এই স্বীকৃতি পরিকল্পনায় তাদের সাথে একমত।
ইসরায়েলের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলোন লিয়েল বলেন, “আমরা চাইলে স্পেন, নরওয়ে বা আয়ারল্যান্ড থেকে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে আনতে পারি। কিন্তু লন্ডন থেকে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। যদি আমাদের ঐতিহাসিক মিত্ররা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তখন সেটাকে আর ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে চালানো যাবে না।”
পশ্চিম তীর দখলের হুমকি
তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখাচ্ছে যে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলে ইসরায়েল প্রতিক্রিয়ায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার সম্প্রতি ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলাপের সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখল করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর ব্রিটিশ ও ফরাসি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেছেন, তারা যদি এই স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইসরায়েল একতরফাভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে — যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ বসতি বৈধ করা এবং ‘এরিয়া সি’ অংশ দখল করা।
অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে
MEE (Middle East Eye) আগেই জানিয়েছিল, ২০১৪ সালেই ব্রিটেন গোপনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদি ইসরায়েল বিতর্কিত E1 বসতি প্রকল্পে অগ্রসর হয়, তবে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে।
ইসরায়েল বর্তমানে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, যা পশ্চিম তীরকে কার্যত দুই ভাগে ভাগ করে দেবে।
ব্রিটেন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া কোনো স্বীকৃতি দিতে চায় না। তবে লেবার পার্টির অভ্যন্তরেও স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।
ব্রিটিশ এমপি উমা কুমারন বলেন, “আমাদের সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে — আমি সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই।”
তবে এখনো লেবার সরকারের অবস্থান কিছুটা নরম — তারা বলছে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে কিনা, সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চায় না।
এমনকি ব্রিটিশ বাণিজ্য দূত ইয়ন অস্টিন এখনই ইসরায়েল সফর করছেন বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য — যদিও কয়েকদিন আগেই বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
সম্পর্ক ভাঙনের পথে?
ইসরায়েল এখন আর কূটনৈতিক ভাষায় কথা বলছে না। গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার সমালোচনা করে বলেন, “যখন গণহত্যাকারী, ধর্ষক ও শিশু হত্যাকারীরা আপনাকে ধন্যবাদ জানায়, তখন আপনি ন্যায়ের পাশে নেই।”
এমন ভাষা এক বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল।
পশ্চিম তীর দখলের হুমকি এবং কূটনৈতিক হুমকির ভাষা ইঙ্গিত দিচ্ছে — যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যদি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইসরায়েল এই পদক্ষেপকে সহজে মেনে নেবে না।
আগামী কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন