আমেরিকান জিম্মি গাজা ছেড়ে চলে গেলেও, ইসরায়েল বলছে যুদ্ধবিরতি নয়

ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি এডান আলেকজান্ডার (২১) সোমবার গাজা থেকে একটি স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতির সুযোগে মুক্ত হয়ে ইসরায়েলে ফিরেছেন। তবে এখনো পূর্ণ যুদ্ধবিরতি বা অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির কোনো চুক্তি হয়নি। এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে ১৯ মাস জিম্মি থাকার পর তাকে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তাকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আল জাজিরা একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায়, আলেকজান্ডার মুখোশ পরা হামাস যোদ্ধা ও এক রেড ক্রস কর্মকর্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আগের মুক্তিপ্রাপ্তদের মতো নয়, এবার তিনি সাধারণ পোশাকে ছিলেন।
মুসলিম বিশ্ব রিলেটেড নিউজ
মুক্তির সময় গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি দেওয়া হয়। তবে হস্তান্তরের কিছুক্ষণ পরই পূর্ব গাজা শহরে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর উপর হামলায় এক নারী নিহত ও কয়েকজন আহত হন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়।
হামাস জানিয়েছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সদিচার হিসেবে তারা এডানকে মুক্তি দিয়েছে। ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন:
“এডান আলেকজান্ডার, মৃত ভেবে নেওয়া হয়েছিল, তাকে মুক্ত করেছে হামাস। দারুণ খবর!”
নেতানিয়াহু জানান, এই মুক্তি সম্ভব হয়েছে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক চাপ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক চাপে। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি এবং গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এডান আলেকজান্ডার নিউ জার্সিতে বেড়ে উঠলেও পরবর্তীতে ইসরায়েলে চলে যান এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের সময় তাকে আটক করা হয়।
নিউ জার্সির টেনাফ্লাই শহরে আলেকজান্ডারের মুক্তির খবরে আনন্দ নাচানাচিতে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা। শহরের মেয়র মার্ক জিন্না বলেন:
“এই শহর গত দেড়-দুই বছর ধরে ক্রমাগত আশা, ক্ষোভ ও উদ্বেগে ছিল। আজ আশা জয় পেয়েছে।”
হামাস, যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের চারপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এ মুক্তি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে গাজায় ৫৮ জন জিম্মি রয়েছেন বলে জানানো হয়। নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েল নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে।
তবে মুক্তির চুক্তি নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। কারণ অন্যান্য জিম্মি পরিবার বলছে, যেসব জিম্মি বিদেশি সহায়তা পায় না, তাদের অবস্থা অবহেলিত।
এদিকে গাজায় খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। Integrated Food Security Phase Classification (IPC) জানায়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি অত্যন্ত উচ্চ এবং বর্তমানে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ অনাহারের মুখোমুখি।
হোস্টেজদের পরিবারের একজন, এইনাভ জাঙ্গাউকার, বলেন:
“নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছেন, যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী নন।”
এদিকে ইসরায়েলের সেনা অভিযানে সোমবার গাজায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হন। ইসরায়েল জানায়, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে হামাসের ২০২৩ সালের হামলায় ১২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫২,০০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সুত্রঃ রইটার্স
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন