জমির লোভে বাবা-মায়ের হাতে প্রাণ গেল ১৫ বছরের জান্নাতীর
-(6).png)
কুড়িগ্রাম জেলার এক অজ পল্লিতে ঘটে গেছে এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা, যা গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মানুষ লোভের কতটা নিচু স্তরে নামতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ হয়ে রইল ১৫ বছরের কিশোরী জান্নাতীর নির্মম হত্যাকাণ্ড।
রাতের নিস্তব্ধতায় যখন ঘুমে বিভোর ছিল গোটা বাড়ি, তখন হঠাৎই বাবা-মা মিলে মেয়েকে ডেকে তোলে। আদুরে কণ্ঠে বলেন, “জান্নাতী, বাইরে একটু চল।” পাশে থাকা চাচি শাহিনা বেগমও তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন। মেয়েটি কিছুটা অবাক হলেও, বাবা-মায়ের কথা অমান্য না করে বের হয় বাড়ির বাইরে।
এক পর্যায়ে তারা এসে পৌঁছায় গ্রামের এক ভুট্টা খেতে। সেখানে এসেই ঘটে সেই পৈশাচিক ঘটনা। পেছন থেকে মেয়েটির হাত-মুখ চেপে ধরা হয়, তারপর রড দিয়ে আঘাত, এরপর ধারালো দা দিয়ে একের পর এক কোপ। মেয়েটি তখন অজ্ঞানপ্রায়, ছটফট করছে যন্ত্রণায়—কিন্তু থেমে যায়নি জান্নাতীর বাবা জাহিদুল ইসলাম, মা মোর্শেদা বেগম এবং চাচি শাহিনা বেগম। মুহূর্তেই মৃত্যু হয় মেয়েটির।
বাংলাদেশ রিলেটেড নিউজ
পরদিন সকালে স্থানীয় কৃষকেরা জমিতে গিয়ে দেখতে পায় জান্নাতীর নিথর দেহ। এরপর শুরু হয় নাটক। বাবা-মা ছুটে এসে কাঁদতে থাকেন, প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থানায় মামলা করেন ২৭ জনের নামে।
তবে পুলিশের কাছে কিছুতেই মিলছিল না ঘটনার সূত্রপাত। কেউ দোষ স্বীকার করছিল না, তদন্তেও আসছিল না সুনির্দিষ্ট প্রমাণ। দুই দিন পর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কিছু ক্লু পেয়ে যায় পুলিশ। এরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা হয় জান্নাতীর বাবা-মা ও চাচি শাহিনা বেগমকে।
পুলিশের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়েন চাচি শাহিনা বেগম। স্বীকার করে ফেলেন, জমিজমা সংক্রান্ত প্রতিশোধ নিতে তারাই মেরেছেন জান্নাতীকে। চাচির স্বীকারোক্তির পর জান্নাতীর বাবা ও মা-ও অস্বীকার করতে পারেননি।
জানা যায়, প্রতিবেশীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ৩২ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল তাদের। সেই জমি দখল নিতে পরিকল্পনা করে নিজের মেয়েকে খুন করে দায় চাপানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। উদ্দেশ্য ছিল, প্রতিবেশীদের জেলে ঢুকিয়ে জমি দখল করে নেওয়া।
এই স্বীকারোক্তি সংগ্রহ করেন কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাবিবুল্লাহ। তিনি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জান্নাতী ছিল স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানায়, সে অত্যন্ত মেধাবী এবং ভদ্র ছিল। সামনের বছরেই এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ার কথা ছিল তার।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় গ্রামের মানুষজন শোকে স্তব্ধ। বহু পরিবার যেখানে একটি সন্তানের জন্য হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরছে, সেখানে সামান্য জমির লোভে এক মেয়ে হারাল তার জীবন—তা-ও নিজেরই বাবা-মা ও চাচির হাতে।
এ ঘটনা আবারো স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ মানুষকে কতটা অমানবিক করে তুলতে পারে।
মুক্তধ্বনি অনুরোধ:
আমরা এমন বর্বরতা ও মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চাই। আপনার চারপাশে যদি এমন কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখেন, দয়া করে নিকটস্থ থানায় জানান। একজনের সচেতনতাই হয়তো কাউকে জান্নাতীর মতো পরিণতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
সুত্রঃ সোশ্যাল মিডিয়া
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন