তিস্তায় ভারতীয় মহড়া ও পুশ-ইন: বাংলাদেশ হুমকিতে?
-(11).png)
পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা নদীর তীরে সম্প্রতি ভারতের সামরিক বাহিনী তিনদিনব্যাপী পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ মহড়া চালিয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘তিস্তা প্রহার’। এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত, এবং এতে ভারতীয় সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্র, কৌশলগত অনুশীলন এবং নদীঘেঁষা জটিল ভূপ্রকৃতিতে যৌথ অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
তিস্তা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে অনুষ্ঠিত এই মহড়াকে ভূরাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, এই সময়েই বাংলাদেশের তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনের সক্রিয় সহযোগিতা দেখা যাচ্ছে—যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, এই মহড়ার মাধ্যমে সেনাবাহিনী তাদের দ্রুত অভিযানের সক্ষমতা ও যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির উৎকর্ষতা প্রমাণ করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মহড়ার নাম, স্থান ও সময় সবই কৌশলগতভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।
জাতীয় রিলেটেড নিউজ
চীনের বিরুদ্ধে বার্তা নাকি বাংলাদেশের প্রতি চাপ?
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা নদীর তীরে এই মহড়া রাজনৈতিক ও সামরিক বার্তা বহন করে। চীনের সহযোগিতায় তিস্তা প্রকল্প শুরু হওয়ায় ভারত এটি প্রতিহত করতে চাইছে, এবং ‘তিস্তা প্রহার’ সেই উদ্দেশ্যেরই অংশ হতে পারে।
একই সময়ে পুশ-ইন কৌশল!
অন্যদিকে, একই সময়েই ভারত থেকে বাংলাদেশে জোরপূর্বক নাগরিক ঠেলে দেওয়ার ঘটনাও সামনে এসেছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সীমান্ত থেকে ১২৩ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করে, যাদের অধিকাংশের দাবি—তারা ভারতের আসামে বসবাস করতেন, এবং ভারতীয় বাহিনী তাদের জোর করে ত্রিপুরা হয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বিজিবি এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রীতিনীতির লঙ্ঘন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
একই ফ্রেমে দুটি কৌশল!
এই দুই ঘটনাকে একসাথে বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয়—ভারত শুধু সামরিক মহড়ার মধ্য দিয়ে সীমান্ত অঞ্চলে শক্তি প্রদর্শন করছে না, বরং বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে চাপে ফেলতে সচেষ্ট রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির সূক্ষ্ম রূপ।
বাংলাদেশের করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে এখন সতর্ক কূটনৈতিক অবস্থান, সামরিক প্রস্তুতি, এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিকল্পনা—এই তিনটি দিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও চীনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রক্ষা করার পথেই অগ্রসর হওয়া দরকার।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন